সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

অর্থকরী ফসল চীনাবাদামের চাষ

চিনাবাদাম চাষ পদ্ধতি
চিনাবাদাম

চরাঞ্চলের জমিতে বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছরই বাদাম চাষ করার সুযোগ রয়েছে। ভালো ফলন হলে একর প্রতি ২২-২৪ মন বাদাম উৎপাদন করা সম্ভাব। তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে চীনা বাদাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। গুনাগুন দিক থেকে চীনাবাদাম সরিষার তেলের পাশাপাশি। বাদাম অধিক লাভের অর্থকড়ি ফসল। এ দেশের আবহাওয়া ও মাটি চীনাবাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

মাটি
চীনাবাদাম চাষের জন্য বেলে দোআঁশ, দোআঁশ এবং চরাঞ্চলের বেলে মাটি উপযুক্ত। চীনাবাদামের পেগ বা বাদামনলী যাতে সহজেই মাটি ভেদ করে নিচে যেতে পারে সেজন্য মাটি নরম হতে হয়।

জমি তৈরি
জমির মাটি ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। ক্ষেতের চার পাশে নালারা ব্যবস্থা করলে পরবর্তীতে সেচ দেওয়া এবং পানি নিকাশের সুবিধা হয়।

বপনের সময়
রবি মৌসুমে অর্থাৎ কার্তিক মাসে (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। মাইজচর বাদাম (ঢাকা-১), বাসন্তীবাদাম (ডিজি-২) ও ঝিঙ্গাবাদাম (এসিসি-১২) রবি ও খরিফ মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদিত হয়। ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১) খরিফ-১ মৌসুমে চাষ করা উত্তম। খরিফ-২ মৌসুমেও  এ জাতের চাষ  করা যায়।

বীজের হার
জাত অনুযায়ী বীজের পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হল।

জাতের নাম বীজের পরিমাণ/হেক্টর (খোসাসহ)
মাইজচর বাদাম (ঢাকা-১) ৯৫-১০০ কেজি
ঝিঙ্গা বাদাম (এসিসি-১২) ১০৫-১১০ কেজি
বাসমত্মী বাদাম (ডিজি-২) ১০৫-১১০ কেজি
ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১) ১১০-১১৫ কেজি

বপন পদ্ধতি
বীজ সারিতে বুনলে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি এবং প্রতি সারিতে গাছের দূরত্ব ১৫ সেমি রাখতে হবে। ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১) জাতের ক্ষেত্রে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ১০ সেতি রাখা প্রয়োজন। বীজ ২.৫-৪.০ সেমি মাটির নিচে রোপণ করতে হবে।

সারের পরিমাণ
চীনাবাদামের জমিতে নিচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

সারের নাম   সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া   ২০-৩০ কেজি
টিএসপি   ১৫০-১৭০ কেজি
এমপি   ৮০-৯০কেজি
জিপসাম   ১৬০-১৮০ কেজি
জিংক সালফেট ৪-৫ কেজি
বোরাক্স/বরিক এসিড ৯-১১ কেজি

বারি চীনাবাদাম-৭ চাষের নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সারের নাম হেক্টরপ্রতি  (কেজি) একরপ্রতি বিঘাপ্রতি
ইউরিয়া ২৫ ১০ ৩.৫
টিএসপি ১৬০ ৬৪ ১২
এমপি ৮৫ ৩৪ ১৬
জিপসাম ৩০০ ১২০ ৪০
বরিক এসিড ১০ ১.৪

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার বীজ বপনের পূর্বে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ৪০-৪৫ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি কেজি বীজে ৭০ গ্রাম অণুজীব সার ব্যবাহর করা যেতে পারে। অণুজীব সার ব্যবহার করলে সাধারণত ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় না।

পানি সেচ
খরিফ-১ মৌসুমে ফসলের অবস্থা বুঝে প্রয়োজনবোধে একটি সেচ দেওয়া যেতে পারে। চর এলাকায় সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ররি মৌসুমে উঁচু জমিতে মাটির রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় বলে ১-২ টি সেচ দেওয়া দরকার।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর একবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা তপরিষ্কার করতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে এবং ফুল আসার সময় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
জাত ও মৌসুমভেদে চীনাবাদাম ১২০-১৫০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়।

অন্যান্য পরিচর্যা

চীনাবাদামের উঁইপোকা দমন
উঁইপোকা চীনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। এরা দলবদ্ধ বা কলোনী তৈরি করে বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড়ের ভিতর গর্ত সৃষ্টি করে। ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।

প্রতিকার
১. পানির সাথে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিলে উঁইপোকা জমি ত্যাগ করে।
২. পাট কাঠির ফাঁদ তৈরি করে এ পোকা কিছুটা দমন করা যায়। মাটির পাত্রে পাটের কাঠি ভর্তি করে পুঁতে রাখলে তাতে উঁইপোকা লাগে। তারপর ঐ কাঠি ভর্তি পাত্র তুলে উঁইপোকা মারতে হবে।
৩. আক্রান্ত মাঠে ডায়াজিনন-১০ জি বা বাসুডিন-১০ জি বা ডারসবান-১০ যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ১৫,১৪, ও ৭.৫ কেজি  হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

চীনাবাদামের পাতার রোগ দমন
সারকোস্পরা এরাচিডিকোলা ও ফেয়োইসারিওপসিস পারসোটো নামক দুটি ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। রোগের আক্রমণের ফলে পাতার উপরে হলদে রেখা বেষ্টিত বাদামি রংয়ের দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ আকারে বড় হয় এবং পাতার উপরে ছড়িয়ে থাকে। গাছ দেরিতে আক্রান্ত হলে পাতার নিচে দাগ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে দাগ গাঢ় বাদামি হতে কালচে বর্ণের হয়। পাতার বাকি অংশের সবুজ রং মলিন হয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে ঝড়ে পড়ে।

প্রতিকার
১. বাসন্তী বাদাম (ডিজি-২) জাত পাতার দাগ রোগ সহনশীল। এ জাতের চাষাবাদের মাধ্যমে রোগের আক্রমণ এড়ানো যায়।
২. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে গাছে ব্যাভিস্টিন ৫০ ডব্লিউপি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পতি ১২ দিন অন্তর ২-৩  বার ছিটালে রোগের প্রকোপ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
৩. ফসল কাটার পর আগাছা পুড়ে ফেলতে হবে।

চীনাবাদামের মরিচা রোগ দমন
পাকসিনিয়া এরাচিডিস নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে মরিচা পড়ার ন্যায় সামান্য উঁচু বিন্দুর মত দাগ দেখা যায়। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতার উপরের পিঠেও এ রোগ দেখা যায়। গাছ এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে চীনাবাদামের ফলন অনেক কমে যায়।

প্রতিকার
১. ঝিঙ্গাবাদাম জাত মরিচা বা রাষ্ট রোগ প্রতিরোধী। এ জাতের চাষের মাধ্যমে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ক্যালিক্সিন (০.১%০ বা টিল্ট-২৫০ ইসি ০.০৫% প্রতি লিটার পানির আধা মিলি হারে ১২ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. পূর্ববর্তী ফসল থেকে গজানো গাছ, আগাছা এবং নাড়া (খড়) পুড়ে ফেলে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায়।

Post a Comment

0 Comments