টবে পেঁয়াজ চাষ |
এই যখন অবস্থা, তখন সত্যি সত্যি কি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না খাওয়া শুরু করতে হবে? কিন্তু এ মসলা ছাড়া তো মুড়ি মাখাও খাওয়া যাবে না। তাহলে কী করার! আছে সমাধান। এরকম আপৎকালীন সমাধান হিসেবে বাসার ছাদ বা ছোট্ট বারান্দাই হতে পারে আপনার উদ্ধার কর্তা। মনে রাখবেন প্রতিবছরই একই সময় পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা দেয়। সুতরাং এই সময়টা টার্গেট করে আপনি টবে চাষ করতে পারেন পেঁয়াজ। আসুন জেনে নিই টবে কীভাবে পেঁয়াজের চাষ করবেন:
স্থান নির্ধারণ
বাসার বারান্দায় বা ছাদে এমন একটি স্থান বেছে নিন যেখানে প্রচুর আলো বাতাস পায়। অন্তত এটুকু নিশ্চিত করুন যেন আপনার টবে দিনের অন্তত তিন ভাগের একভাগ সময় সরাসরি সূর্যের আলো পায়।
টব
পেঁয়াজ চাষের জন্য টব বা প্লাস্টিক অথবা কাঠের কনটেইনারও ব্যবহার করা যায়। মাঝারি সাইজের একটি টব বেছে নিন। প্লাস্টিকের বালতিতেও করতে পারেন। তবে তলা যেন মেঝে থেকে উপরে থাকে। এ জন্য ইটের উপর টবটি রাখতে পারেন। টব বা বালতির তলায় কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিন যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে। মাঝারি আকৃতির টবে ৫০টি পেঁয়াজ চারা লাগানো সম্ভব।
মাটি প্রস্তুত
উর্বর মাটি এবং পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত টবে পেঁয়াজ চাষ করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। পেঁয়াজ সাধারণত ঠাণ্ডা জলবায়ুর উপযুক্ত ফসল। যদি পেঁয়াজ চাষ করার সময় তাপমাত্রা বেশি হয় তাহলে সেই পেঁয়াজ বেশি ঝাঁঝালো হবে। তবে মনে রাখবেন এঁটেল মাটিতে পেঁয়াজের চাষাবাদ করা যায় না। মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। আপনার সুবিধার জন্য: টবের কানা থেকে অন্তত দেড় ইঞ্চি নিচে পর্যন্ত মাটি ভরতে হবে। এ জন্য একভাগ মাটি, একভাগ বালু, দুইভাগ কম্পোস্ট, সামান্য কাগজ কুচি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। বাজার থেকে কেঁচো কম্পোস্ট কিনতে পারেন, সাধারণ প্যাকেটজাত কম্পোস্টও কিনতে পাওয়া যায়।
পেঁয়াজ তিনটি পদ্ধতিতে চাষ করা যায়
১) কন্দ রোপণ করে। অর্থাৎ আস্ত পেঁযাজ রোপণ করতে পারেন।
২) সরাসরি বীজ বুনে।
৩) বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি। পরে সেই চারা টবে রোপণ । বীজ থেকে চারা তৈরি করে রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ভাল বীজের বৈশিষ্ট্য তিনটি
• ভাল বীজ হাত নিয়ে চাপ দিলে চাপ বসবে না। খারাপ বীজ হলে চাপ বসবে।
• মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে চাপ দিলে ভাল বীজ হলে ভেঙ্গে যাবে। খারাপ বীজ হলে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।
• পানিতে দিলে ভাল হলে পানিতে ডুবে যাবে। খারাপ হলে ভেসে উঠবে।
যত্ন
বীজ বোনার পর ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অথবা কাগজের টুকরা বিছিয়ে মালচিং করতে পারেন। এতে মাটিতে রস বেশিদিন থাকবে। বীজ ভালো গজাবে। সবুজ চারা বেরিয়ে আসলে কাপড় বা মালচিং সরিয়ে ফেলতে হবে। চারার টবটি অবশ্যই ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। চারার তিনটি পাতা গজালে তুলে টবে রোপণ করতে হবে। চারা খুব গভীরে রোপণ করা যাবে না। অতিরিক্ত শিকড় থাকলে বা শিকড় বেশি লম্বা হলে ছেঁটে রোপণ করা ভালো। টবে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। পানি বেশি হলে বের করে দিতে হবে। পানি জমে থাকলে পেঁয়াজ চারা বাঁচে না। চারায় কন্দ আসতে শুরু করলে, অর্থাৎ গোড়ায় গুটি বাঁধতে শুরু করার আগে একবার গোড়ার মাটি আলগা করে ভার্মি কম্পোস্ট ও ছাই দিতে হবে।
# পেঁয়াজের বিকল্প চিভ চাষ করুন টবে #
ফসল তোলা
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আগাম চাষে সাধারণতঃ চারা রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এবং নাবী চাষে চারা রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ সংগ্রহের উপযোগী হয়ে যায়। পেঁয়ালে ফুলের দণ্ড বের হলে গোড়া থেকে কেটে নিতে হবে। অনেকে এটিকে ফুলকা বলে। এটি রান্না করে বা কাঁচা খাওয়া যায়। পেঁয়াজ সংগ্রহ করার অন্ততে এক সপ্তাহ আগে গোড়ার দুই ইঞ্চি উপর থেকে গাছ কেটে ফেলতে হবে। এতে পেঁয়াজ ভালো থাকে। আর পাতা খাওয়াও যায়।
বিশেষ নোট
পেঁয়াজের চাষ শুধু শীতকালেই হয় না এখন বর্ষাকালেও চাষ করা হচ্ছে। তবে এর জন্য আলাদা জাত আছে। বীজ সংগ্রহের সময় তা জেনে নিন। আর টবে চাষাবাদে সাধারণত রোগবালাই কম হয়। তাছাড়া ক্ষুদ্র আকারে এমন চাষে রোগের চিকিৎসা করাতে ব্যয় বেড়ে যাবে। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
0 Comments