সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

মানসম্মত রাসায়নিক সার চেনার উপায় ও ব্যবহারবিধি

মানসম্মত রাসায়নিক সার
রাসায়নিক সার
বাংলাদেশে সাধারণত  ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড ব্যবহার করা হয়। এ সারগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং ফসল উৎপাদনে তাদের প্রভাব নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

ইউরিয়া সার
ইউরিয়া বহুল ব্যবহৃত নাইট্রোজেন সংবলিত একটি রাসায়নিক সার। এটি  প্রিল্ড, গ্রানুলার, পেলেট, পাউডার এবং ক্ষুদ্র স্ফটিক হিসেবে উৎপাদিত হয়। সহজে পানিতে গলে যায় বা দ্রবীভূত হয়।  দেখতে সাদা ধবধবে বা অনেক ক্ষেত্রেই রঙবিহীন। এ সারের কোনো গন্ধ নেই। এটি অম্লীয় বা ক্ষারীয় নয়।

ব্যবহারের সুবিধার্থে  ইউরিয়া প্রিল্ড (ক্ষুদ্র দানা, ২ মিমি এর কম) এবং দানাদার(২-৫মিমি.) হিসেবে বাজারজাত করা হয়। আইএফডিসি  ক্ষুদ্র  উদ্যোক্তাদের  মাধ্যমে গুটি ইউরিয়া বা ইউএসজি বাজারজাত করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে আসছে। বর্তমানে ২২ জেলায় (ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং দক্ষিণ অঞ্চলের ২০টি জেলার ১২২টি উপজেলায়) কৃষি উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ প্রকল্পের (আপি) মাধ্যমে ১.৮-২.৭ গ্রাম ওজনের গুটি ইউরিয়ার ৬০০০টি প্রদর্শনী স্থাপনের ব্যবস্থা নিয়েছে। আউশ ও আমন ধানে প্রতি চার গোছার কেন্দ্রে ১.৮ গ্রাম ওজনের ১টি এবং বোরো ধানে ২.৭ গ্রাম ওজনের ১টি গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

ইউরিয়া পুষ্টি উপাদানের চাবিকাঠি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে যা শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তার উৎসাহিত করে। শাকসবজির পর্যাপ্ত পাতা উৎপাদনে সহায়তা করে। আমিষ ও নিউক্লিক এসিড উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। ক্লোরোফিল উৎপাদনের মাধ্যমে গাছকে সবুজ বর্ণ দান করে। শর্করা উৎপাদন বাড়ায়। ফলের আকার বড় করতে সাহায্য করে। অন্যান্য সব আবশ্যক উপাদানের পরিশোষণ হার বাড়ায়। কুশি উৎপাদনে সহায়তা করে।

মাটিতে নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদানের  ঘাটতি হলে ক্লোরোফিল সংশ্লেষণের হার কমে যায়। ফলে গাছ স্বাভাবিক সবুজ বর্ণ হারিয়ে ফেলে। পাতার আকার ছোট হয় এবং শাখা প্রশাখার বৃদ্ধি হ্রাস পায়, ফলে গাছ খর্বাকার হয়। গাছের পাতা হালকা সবুজ থেকে হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে এবং অকালেই ঝরে পড়ে। পাতার অগ্রভাগ হতে বিবর্ণতা শুরু হয়। বৃন্ত এবং শাখা প্রশাখা সরু হয়। গোলাপি অথবা হালকা লাল রঙের অস্বাভাবিক বৃন্ত হয়। পুরাতন পাতার মধ্যশিরার শীর্ষভাগ হলুদাভ-বাদামি বর্ণ ধারণ করে।  ফুল ও ফলের আকার ছোট হয়। ফলন কমে যায়।

নাইট্রোজেনের প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে গাছের কাঠামো ও গঠন দুর্বল হয়। ফুল ও ফল উৎপাদনে বিলম্বিত হয়। পোকামাকড় ও রোগ আক্রমণ বেড়ে যায়। পাতার অংশ ভারি হলে গাছ হেলে যায়। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনে অনেক ফল পানসে হয়।

টিএসপি ও ডিএপি সার
টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি(ডাইএ্যামোনিয়াম ফসফেট)-এ দুটোই ফসফেট সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার। বাংলাদেশে এ সার দুটোর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দানাদার  দ্রব্য হিসেবে এ   সার দুটো বাজারজাত করা হয়। এ সার দুটোতেই  শতকরা ২০ ভাগ ফসফরাস থাকে।  টিএসপিতে  শতকরা ১৩ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১.৩ ভাগ গন্ধকও বিদ্যমান থাকে। ডিএপিতে ফসফেট ছাড়াও ১৮% নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকে যার কারণে ইহা চুনযুক্ত পলি মাটির জন্য একটি উত্তম সার।

রক ফসফেট নামক খনিজ পদার্থের সঙ্গে ফসফরিক এসিডের বিক্রিয়ার মাধ্যেমে টিএসপি সার প্রস্তুত করা হয়। টিএসপি সারের রঙ ধূসর থেকে গাঢ় ধূসর হয়ে থাকে। এ সারে অম্লস্বাদযুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। এ সার পানিতে সহজেই গলে যায়।

ডিএপি সার এ্যামোনিয়া এবং ফসফরিক  এসিডের  মধ্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে উৎপাদন করা হয় । এ সার সহজেই পানিতে দ্রবণীয়। এ সারের রঙ সাধারণত সাদাটে থেকে গাঢ় ধূসর হয়ে থাকে। ডিএপিতেও  অম্লস্বাদযুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে।

ফসফরাস কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে। শর্করা উৎপাদন ও আত্তীকরণে সাহায্য করে। শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তার উৎসাহিত করে। গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করে। ফুল, ফল ও বীজে গুণগতমান বাড়ায়।

মাটিতে ফসফরাসের ঘাটতি হলে কাণ্ড এবং মূলের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। গাছের বৃদ্ধি কু-লিকৃত বা পাকানো হয়। পুরাতন পাতা অকালে ঝরে যায়। পার্শ্বীয় কাণ্ড এবং কুড়ির বৃদ্ধি কমে যায়। ফুলের উৎপাদন কমে যায়। পাতার গোড়া রক্তবর্ণ অথবা ব্রোনজ রঙ ধারণ করে। পাতার পৃষ্ঠভাগ নীলাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে। পাতার কিনারে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় এবং শুকিয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়

ফসফরাসের পরিমাণ অধিক হলে ফলন কমে যায়। গাছে অকাল পরিপক্বতা আসে।  গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

এমওপি সার
এমওপি বা মিউরেট অব পটাশ সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি পটাশ সার। এসারে শতকরা ৫০ ভাগ পটাশ থাকে। এসার সহজে পানিতে গলে যায় বা দ্রবীভূত হয়। এ সারের রঙ সাধারণত সাদা থেকে হালকা বা গাঢ় লালচে রঙের এবং এর আকৃতি ছোট থেকে মাঝারি আকারের স্ফটিকাকৃতির হয়ে থাকে।

পটাশিয়াম উদ্ভিদ কোষের ভেদ্যতা রক্ষা করে। উদ্ভিদে শ্বেতসার দ্রব্য স্থানান্তরে বা পরিবহনে সহায়তা করে।  লৌহ ও ম্যাংগানিজের কার্যকারিতা বাড়ায়। আমিষ উৎপাদনে সাহায্য করে। উদ্ভিদে পানি পরিশোষণ, আত্তীকরণ ও চলাচল তথা সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়ায়। গাছের কাঠামো শক্ত করে। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস পরিশোষণে সমতা বিধান করে।

পটাশের ঘাটতি হলে পুরাতন পাতার কিনরা হতে বিবর্ণতা শুরু হয়। গাঢ় নীল বর্ণের পাতা দেখা যায়। পাতার আন্তঃশিরায় বাদামি বর্ণের টিস্যু হতে দেখা যায়। পাতার উপরিভাগে কুঞ্চিত হতে বা ভাঁজ পড়তে দেখা যায়। গাছ বিকৃত আকার ধারণ করে। ছোট আন্তঃপর্বসহ গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং প্রধান কা-টি মাটির দিকে নুয়ে পড়ে। অনুপযোগী আবহাওয়ায় গাছ খুব সংবেদনশীল হয়।  পোকামাকড় ও রোগবালাই এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

পটাশের সরবরাহ বেশি হলে ক্যালসিয়াম ও বোরনের শোষণ হার কমে যায়। বোরনের অভাবজনিত লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। পানি-নিঃসরণের হার কমে যায়। গাছের বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

জিপসাম সার
দেশের একমাত্র টিএসপি সারের কারখানায় প্রায় ৬৫ হাজার মে. টন জিপসাম উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। এ সারে শতকরা ১৭ ভাাগ গন্ধক এবং ২৩ ভাগ ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকে। এ সারের নমুনায় আর্দ্রতা বেশি থাকায় তা বেশি দিন বস্তায় সংরক্ষণ করা যায় না। প্রকৃত জিপসাম সার আলোতে কিছুটা চিক চিক করে এবং এ সারের হস্তানুভূতি কোমল প্রকৃতির। এ সার সাদাটে বা ধূসর বর্ণের পাউডারের  মতো।

গন্ধক আমিষ উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। ক্লোরোফিল গঠনে সাহায্য করে। গাছের বর্ণ সবুজ রাখে। বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে। ফসলের গুণগতমান বাড়ায়।

মাটিতে গন্ধকের অভাব হলে গাছের সবুজ বর্ণ বিনষ্ট হয়, কাণ্ড সবুজ ও চিকণ হয়। পাতা ফ্যাকাশে সবুজ বা হলুদ আকার ধারণ করে। গাছে শর্করা এবং নাইট্রোজেন বৃদ্ধি পায়।

জিপসাম প্রয়োগের মাত্রা বেশি হলে শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়।

জিংক সালফেট সার
বাংলাদেশের জিংক বা দস্তা ঘাটতি মাটিতে দুই ধরনের দন্তা সার ব্যবহার হয়ে আসছে। একটি জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট এবং অপরটি জিংক সালফেট হেপটাহাইড্রেট। সামান্য পরিমাণ অন্য একটি দস্তা সার চিলেটেড জিংক প্রে করে সরাসরি গাছে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। জিংক সালফেট মনোহাইড্রেটে শতকরা ৩৬.০ ভাগ দস্তা ও  ১৭.৬ ভাগ গন্ধক থাকে। অপরদিকে জিংক সালফেট হেপটাহাইড্রেটে দস্তা ও গন্ধকের পরিমাণ যথাক্রমে শতকরা  ২১.০ এবং ১০.৫ ভাগ বিদ্যমান থাকে। চিলেটেড জিংকে শতকরা ১০ ভাগ দস্তা বিদ্যমান থাকে।
জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট সারটি আসলে ক্ষুদ্রাকার স্ফটিক আকারে উৎপাদিত হয়। ফসলে প্রয়োগের সুবিধার্থে ইহাকে দানাদার করে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এ সার রঙবিহীন থেকে সাদাটে এবং অনেকটা সাগু দানার মতো দেখা যায়। পানিতে সহজে গলে যায়।

জিঙ্ক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সারটি দেখতে স্ফটিকাকৃতি চিনির দানার মতো এবং ঝুরঝুরে। প্রকৃত হেপটাহাইড্রেট দস্তা সার পানিতে সহজেই গলে গিয়ে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরি করে।

জিঙ্ক সালফেট (মোনোহাইড্রেট) সার জিঙ্ক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) এর তুলনায় অধিক হারে মাটিতে ব্যবহার করা হয়। স্প্রে করেও কোনো কোনো ফসলে প্রয়োগ করা হয়।

দস্তা গাছে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। ক্লোরোফিল উৎপাদনে সহায়তা করে। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফসলের ফসফরাস পুষ্টি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শিম জাতীয় সবজির উল্লেখযোগ্যভাবে ফলন বাড়ায়।

মাটিতে দস্তার ঘাটতি হলে গাছের পাতায় তামাটে অথবা দাগের আকারে বিবর্ণতা দেখা যায়। ক্ষুদে পাতা বা রোজেট  লক্ষণের সৃষ্টি হয়। নতুন পাতার গোড়ার দিক থেকে বিবর্ণতা শুরু হয়। আন্তঃশিরার স্থানে বিবর্ণতা প্রকটভাবে দেখা দেয়।

জিংকের পরিমাণ বেশি হলে গাছে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত দস্তা আমিষ উৎপাদন অসুবিধার সৃষ্টি করে।

বোরণ সার
বরিক এসিড ও সলুবর সার বোরণ ঘাটতি এলাকায় বহুল ব্যবহৃত বোরণ সার। বরিক এসিডের রঙ সাদা। ইহা অনিয়তিকার এবং স্ফটিকাকৃতির। গরম পানিতে সম্পূর্ণ গলে যায়।
সলুবর সার বোরণ ঘাটতি এলাকায় জন্য একটি উৎকৃষ্ট বোরণ সার। এটি দেখতে ধবধবে সাদা, হালকা, মিশি পাউডারের মতো, ঠাণ্ডা পানিতে সল্যুবর সম্পূর্ণ গলে যায় এবং পাত্রে কোনো ধরনের তলানি পড়ে না।
বোরণ পুষ্টি উপাদান গাছের কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাতা ও ফুলের রঙ আকর্ষণীয় করে। পরাগরেণু সবল ও সুস্থ রাখে। বীজ উৎপাদনে সহায়তা করে এবং চিটা রোধ করে।

বোরণের ঘাটতিতে গাছের অগ্রভাগ মরে যায়, কাণ্ড কালো বর্ণ ধারণ করে।  শিকড় বৃদ্ধি হ্রাস পায়। কোষ প্রাচীর ভেঙে যায়। গাছ মচ মচ ভাব ধারণ করে।

বোরণের প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে কচি পাতা এবং ডগা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলন অনেক কমে যায়।

মাঠ পর্যায়ে গুণগত সার চেনার উপায়
রাসায়নিক সারের ব্যাপক চাহিদা ধাকার কারণে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের  জন্য ভেজাল সার উৎপাদন এবং আমদানিকৃত সারে ভেজাল মিশ্রিত করে তা বাজারজাত করে থাকে। এর ফলে কৃষক ভাইয়েরা প্রতারিত হয়ে আসছেন। সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করেও কাক্সিক্ষত ফলন পান না। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে জমির উর্বতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তাই কৃষক ভাইয়েরা যদি গুণগত সার চেনার বা শনাক্ত করার কৌশল জানতে পারেন, তাহলে ভেজাল সারের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। নিচে ভোজাল সার চেনার কিছু কৌশল বর্ণনা করা হল।

ইউরিয়া
দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি  করা ইউরিয়া সারে সাধারণত ভেজাল পরিলক্ষিত হয় না। তবে ডোলোমায়িট বা সস্তা রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ছোট দানা তৈরি করে ইউরিয়ার দানার সঙ্গে ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত করলে রঙ দেখে তা শনাক্ত করা যাবে।

আসল ইউরিয়া সার কোনো অবস্থাতেই স্ফটিক আকৃতির হবে না। ইহা দানাদার বা প্রিল্ড (ক্ষুদ দানাদার) হিসেবে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। ইহা সহজেই পানিতে গলে যায়।

এক চা চামুচ ইউরিয়া আধা গ্লাস পানিতে ঢেলে চামিচ দিয়ে নাড়াচাড়া করলে তাৎক্ষণিকভাবে গলে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরি হবে। এ দ্রবণে হাত দিলে বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হবে।

আর একটি সহজ পরীক্ষা হলো কিছু ইউরিয়া খোলা পাত্রে রাখলে বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে কিছুক্ষণের মধ্যে ভিজে উঠবে। এতে প্রমাণিত হবে যে ইউরিয়ার নমুনাটিতে কোনো ভেজাল নেই।

টিএসপি
টিএসপিতে অম্লস্বাদযুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। এ সার পানিতে সহজেই দ্রবণীয়।  এক চা চামুচ টিএসপি পানিতে মিশালে  তাৎক্ষণিকভাবে গলে ডাবের পানির মতো দ্রবণ তৈরি হবে, পক্ষান্তরে ভেজাল টিএসপি পানিতে মিশালে ঘোলা দ্রবণ তেরি হবে। এফএমপি দানা এবং কাঁদা মাটি, জিপসাম ও ডলোমাইট দিয়ে তৈরি দানা যদি ভেজাল হিসাবে টিএসপিতৈ মিশানে হয় তা তলানি আকারে গ্লাসের নিচে জমা হবে। 
                                                                                     
প্রকৃত টিএসপি অধিক শক্ত বিধায় দুটো বুড়ো নখের মাঝে রেখে চাপ দিলে সহজে ভেঙ্গে যাবে না, কিন্তু ভেজাল  টিএসপি অপেক্ষাকৃত নরম হওয়ায় সহজে ভেঙে যাবে। ভেজাল  টিএসপি সারের ভাঙার ভেতরের অংশের রঙ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এফএমপির দানা যদি ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত তা সহজে ভাঙবে না এবং পানিতেও গলবে না।

ডিএপি
ডিএপি সারেও টিএসপি সারের মতো অম্লস্বাদযুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। এ সারও সহজেই পানিতে গলে যায়।

প্রকৃত ডিএপি সারে নাইট্রোজেন বিদ্যমান থাকায় বাহিরে একটি কাগজে খোলা অবস্থায় কিছু দানা রাখলে তা বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে কিছুক্ষণের মধ্যে ভিজে উঠবে।

এক চা চামুচ ডিএপি সারের সঙ্গে খাবার চুন মিশিয়ে কষা দিলে এমোনিয়ার তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ বের হলে বুঝা যাবে সারটি প্রকৃত ডিএপি।

আর একটি সহজ পরীক্ষা হলো এক চা চামুচ ডিএপি সার আধা গ্লাস পানিতে মিশালে তাৎক্ষণিকভাবে গলে গিয়ে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈয়ার হবে, পক্ষান্তরে গন্ধক জাতীয় কোনো পদার্থ ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত থাকলে ঘোলা দ্রবণ তৈরি হবে।

এমওপি
এমওপি সারে ঝাঁঝালো গন্ধ নেই, তবে জিবে দিলে ঝাঁঝালো স্বাদ পাওয়া যায়। বর্ষা কালে খোলা অবস্থায় রেখে দিলে বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে ভিজে উঠবে এবং ক্রমান্বয়ে সারে আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
আধা চা চামচ এমওপি সার গ্লাসের পানিতে মিশালে তাৎক্ষণিকভাবে গলে পরিষ্কার দ্রবণ তৈরি হবে, পক্ষান্তরে ভেজাল এমওপি পানিতে মিশালে অদ্রবণীয় বস্তু যেমন বালি, কাচের গুঁড়া, ক্ষুদ্র সাধা পাথর, ইটের গুঁড়া ইত্যাদি  তলানি আকারে নিচে জমা হবে। আসল এমওপি সারের ক্ষেত্রে  গ্লাসে হাত দিলে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে, নকল সারে কম ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। সারে যদি ভেজাল হিসেবে লাল বা অন্য কোনো রঙ মিশ্রিত থাকে, পানির রঙ সেই অনুযায়ী হবে এবং রঙ ভেসে উঠবে। এছাড়া দ্রবণে হাত দিলে রঙ লেগে যাবে।

জিপসাম
একটি কাচের বা চীনা মাটির পাত্রে এক চা চামচ জিপসাম সারের উপর ১০ ফোঁটা পাতলা (১০%) হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশালে যদি বুঁদ বুঁদ দেখা যায় তবে ধরে নেয়া যাবে যে জিপসাম সারটি ভেজাল।
কখনও কখনও চুনের গুঁড়া ও মাটির গুঁড়া মিশিয়ে ভেজাল জিপসাম তৈরি করা হয়।

জিংক সালফেট সার
প্রকৃত জিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) সার দেখতে রঙবিহীন ক্ষুদ্রাকার স্ফটিক আকৃতির। ইহা দানাদার হিসেবেও বাজারজাত করা হয়।
সহজ পরীক্ষার জন্য এক চা চামচ সার আধা গ্লাস পানিতে দ্রবীভূত করলে তা সম্পূর্ণ গলে যাবে এবং দ্রবণটি ঘোলাটে হবে। যদি নমুনাটি সঠিক জিঙ্ক সালফেট (মোনোহাইড্রেট) হয়, তাহলে গাঢ় ঘোলা দ্রবণটি ধীরে ধীরে গ্লাসের নিচ থেকে উপরের দিকে পরিষ্কার হতে থাকবে। যদি নমুনাটি ভেজাল জিঙ্ক সালফেট (মোনোহাইড্রেট) হয়, তাহলে কিছুক্ষণ পর গাঢ় ঘোলাটে দ্রবণটির উপরের অংশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে গ্লাসের নিচের দিকে নামতে থাকবে। আসল জিংক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সার দেখতে সাদা ক্ষুদ্রাকার স্ফটিক আকৃতির । এক চা চামচ জিঙ্ক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) আধা গ্লাস পানিতে মিশালে সারটি সম্পূর্ণ গলে যাবে এবং পাত্রে কোনরূপ তলানি পড়বে না।

একই পরিমাণ জিঙ্ক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সার জিঙ্ক সালফেট (মোনোহাইড্রেট সারের তুলনায় ওজনে অনেক হালকা হয়।

একই পরিমাণ জিঙ্ক সালফেট (হেপটাহাইড্রেট) সার জিঙ্ক সালফেট (মোনোহাইড্রেট সারের তুলনায় ওজনে অনেক হালকা হয়।

বোরন সার
বরিক এসিডের রঙ সাদা। ইহা অনিয়তিকার এবং স্ফটিক আকৃতির হয়।  হাতে কিছু পরিমাণ বরিক এসিড নিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষা দিতে থাকলে এক পর্যায়ে পিচ্ছিল তেলতেলে ভাব অনুভূত হবে। কিন্তু ভেজাল বরিক এসিডে পিচ্ছিল তেলতেলে ভাব অনুভূত হবে না। এক চা চামচ বরিক এসিড এক গ্লাস গরম পানিতে মিশালে উহা সম্পূর্ণ গলে যাবে এবং গ্লাসের তলায় কোনো প্রকার তলানি পড়বে না।

সল্যুবর বোরন দেখতে ধবধবে সাদা, হালকা, মিহি পাউডারের মতো। এক চা চামচ সল্যুবর  গ্লাসে ঠাণ্ডা পানিতে দ্রবীভূত করলে প্রকৃত সল্যুবর বোরন সার সম্পূর্ণ গলে যাবে এবং পাত্রে কোনো প্রকার তলানি পড়বে না। এ দ্রবণে এক চিমটি বেরিয়াম ক্লোরাইড মেশালে দ্রবণে কোনো অধঃক্ষেপ পড়বে না। যদি নমুনাটিতে সোডিয়াম সালফেট ভেজাল হিসেবে মিশ্রিত থাকে তাহলে বেরিয়াম সালফেটে অধঃক্ষেপ পড়বে এবং দ্রবণটি তাৎক্ষণিকভাবে দুধের মতো সাদা হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন: জৈব সার ব্যবহারের নানাবিধ উপকারিতা

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)

Post a Comment

0 Comments