গরুর আদর্শ খাবার |
দানাদার খাবার
গরুর সহায়ক খাবার হিসেবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গরুর বডি ওয়েট বা শরীরের মোট ওজনের ২% দানাদার খাবার স্টান্ডার্ড বা আদর্শ মান ধরা হয়। অর্থাৎ গরুর ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তাহলে দৈনিক দানাদার খাবার দিতে হবে ২ কেজি। দুধের গরুকে প্রথম ৩ কেজি দুধের জন্য ৩ কেজি দানাদার খাবার, পরের প্রতি ৩ কেজি দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাবার দিলেই যথেষ্ট।
দানাদারের মধ্যে ৫৫-৬০% শর্করা (চালের কুড়া, খুদ, ভুট্টা, গমের ভুষি), ২৫-৩০% আমিষ ( ডালবীজ যেমন : এঙ্কর, মসুর, মুগ, খেসারি, মাসকলাই বা ডালবীজের খোসা অথবা সয়াবিন দানা), ১০-১২% চর্বি ( তেলজাতীয় বীজের খৈল, যেমন: সরিষা, তিল, নারিকেল, সয়াবিন, কালোজিরার খৈল), ভিটামিন ও খনিজ লবণ ২-৩% (যেমন : খাবার লবণ, ক্যালসিয়াম, প্যাকেটজাত ভিটামিন, জিংক, বিট লবণ)। আখের ঝোলাগুড়ে কিন্তু প্রচুর শর্করা থাকে। এটি হজমেও সাহায্য করে।
তবে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি দিতে পারলে অন্য খাবার কিছুটা কমিয়ে দেয়া যায়। তাছাড়া দানাদার খাবারের পরিমান সেই খাবারের পুষ্টিমানের ওপরেও নির্ভর করে। প্রতি কেজি মধ্যম মানের কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় দানাদার খাবার থেকে গড়ে ১০-১২ মেগাজুল, আমিষ জাতীয় খাবার থেকে গড়ে ১২-১৪ মেগাজুল এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে ২৫-৪০ মেগাজুল শক্তি গরু পেয়ে থাকে। অবশ্য শুধু ক্যালরি দিয়ে কিন্তু খাবারের পুষ্টিমান বিচার করা যাবে না। খামারের বাঁধা গরুকে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার দেওয়া ঠিক না। এ কারণে শর্করা ও তেল/চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে বেশি পরিমানে আমিষ জাতীয় খাবার দিতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ লবণ যথেষ্ট পাচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে।
ঘাস
গরু মূলত তৃণভোজী প্রাণী। ফলে শুধু ঘাস ও পানি খেয়েও একটি গরু কিন্তু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবার থাকতে পারে। তবে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক খামার করতে হলে গরুকে বাড়তি খাবার দিতে হবে তা না হলে কাঙ্ক্ষিত প্রডাকশন পাবেন না। পাশাপাশি অধিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ উন্নতজাতের উচ্চফলনশীল ঘাস চাষ করতে হবে যাতে কম জমিতে বেশি ঘাস পাওয়া যায় পাশাপাশি ঘাস থেকে অধিকাংশ আমিষ ও খনিজ আসে। এর জন্য পারা, ইপিলইপিল, জার্মান, পাকচং, নেপিয়ার, ভুট্টা, সরগম ইত্যাদি ঘাস চাষ করা যেতে পারে।
গরুকে কমপক্ষে শরীরের ওজনের ৫% ঘাস দিতে হবে। মধ্যম পুষ্টি মানের যেকোনো ১ কেজি ঘাস থেকে গড়ে ২ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়। সঙ্গে তো আমিষ ও খনিজ থাকছেই।
আরো পড়ুন: হাইব্রিড ঘাসের বিষক্রিয়া
খড়/ হে
খড় বলতে সাধারণ ধানের শুকনো খড়কেই বুঝায়। শুকনো খড়ের প্রায় পুরোটাই আসলে সেলুলোজ অর্থাৎ এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট। পুষ্টি কম থাকলেও রুমেনের (চার প্রকোষ্ঠের পাকস্থলী) স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য খড় খুব গুরুত্বপূর্ণ গোখাদ্য। প্রতি কেজি খড় থেকে গড়ে ৫-৬ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়।
আর হে হলো অন্যান্য শুকনো খড় যেমন: মাসকলাই, মসুর, গম, বর্ষাকালে সংগ্রহ করে শুকিয়ে রাখা বিভিন্ন ঘাস, জমি অতিরিক্ত ফলন হওয়া উন্নতমানের ঘাস শুকিয়ে রাখা, শুকনো আলফালফা ইত্যাদি। খড়ে চেয়ে হে জাতীয় খড়ে অনেক বেশি পুষ্টি থাকে। যেমন শুকনো আলফালফাতে প্রচুর পরিমানে আমিষ থাকে। একই রকম পুষ্টি পাওয়া বিভিন্ন ডালের শুকনো গাছেও।
সাইলেজ
সাইলেজ ঘাসের বিকল্প খাবার এবং পুষ্টিগুণ প্রায় ঘাসের সমান বা সামান্য বেশি। প্রতি কেজি মধ্যম মানের সাইলেজ থেকে গড়ে ৩ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়। ঘাস, খড় ও সাইলেজ মিলে বডি ওয়েটের কমপক্ষে ১০% রাফেজ (ঘাস লতাপাতা জাতীয় পশুখাদ্য) জাতীয় খাবার দিতে হবে।
ষাঁড়ের জন্য ইউএমএস (ইউরিয়া-মোলাসেস-স্ট্র)
ষাঁড়কে তার লাইভ ওয়েটের (শরীরের ওজন) সর্বোচ্চ ২% দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ ১০০ কেজির ষাঁড়কে দৈনিক ইউএমএস দেওয়া যেতে পারে সর্বোচ্চ ২ কেজি। তবে অল্প অল্প করে দিয়ে শুরু করতে হবে। গরুকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না। রুচি সহকারে খেতে শুরু করলে ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াতে হবে। তবে অবশ্যই দিনে শরীরের ওজনের ২% এর বেশি নয়। ইউএমএস দিলে অন্য খাবার কমিয়ে দিতে হবে। এটি খেলে গরুর ওজন কিন্তু দ্রুত বাড়তে থাকবে। এ কারণে শুধু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পেই ইউএমএস ব্যবহার করা উচিৎ। অসুস্থ গরুকে ইউএমএস খাওয়ানো যাবে না।
বাছুরের জন্য দুধ
পর্যাপ্ত দুধ বাছুরের পুষ্টি এবং সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে জরুরি। বাছুরের ওজনের কমপক্ষে ১০% দুধ দিতে হবে। মায়ের কাছ থেকে যথেষ্ট দুধ না পেলে আলাদা করে ফিডারে খাওয়াতে হবে।
মনে রাখতে হবে, গরুকে দৈনিক ৮ কেজির বেশি দানাদার দেওয়া ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত দানাদার খাবার গরুর হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এসিডিটি সৃষ্টি করতে, ফলে পেট ফুলে যেতে পারে বা বদহজম হতে পারে। দানাদার খাবার বেশি খাওয়ালে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, শরীরের অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে পারে। এতে গরুর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
0 Comments