ক. স্ত্রী ফুল খ. উভলিঙ্গ ফুল গ. পুরুষ ফুল ঘ. স্ত্রী গাছের ফল ঙ. উভলিঙাগ গাছের ফল চ. পুরুষ গাছ |
পেঁপে গাছ ৩০ ফুট পর্ন্ত লম্বা হতে পারে এবং চারদিকে ১৫ ফুট জায়গা দখল করে নেয়।। সারা দিন রোদ পায় এমন স্থানে পেঁপে ভালো হয়। অর্থাৎ ফলবতী গাছ পেতে চাইলে ভালো রোদ পায় এমন স্থানে পেঁপে গাছ লাগাতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানেও পেঁপে গাছ হয়, তবে সেক্ষেত্রে এটি শুধু সৌন্দর্ বর্ধনের কাজেই লাগবে। দক্ষিণ আমেরিকায় এ ফলের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়। বন্য অবস্থায় একটি পেঁপে ৯ কেজি ওজনেরও হতে পারে।
পেঁপে গাছ রোপণের উপযুক্ত হচ্ছে, খুব কাছাকাছি কোনো গাছগাছালি নেই, মাটিতে যথেষ্ট রস আছে কিন্তু পানি জমে না এবং মাটিতে প্রচুর জৈব উপাদান আছে এমন স্থান। এসব বিষয় নিশ্চিত করলে একবার গাছ বড় হয়ে যাওয়ার পর পেঁপে গাছের আর যত্ন না নিলেও চলে। সারা বছর ফল দিতে থাকবে। বড় কন্টেইনারেও পেঁপে চাষ করা যায়।
পেঁপে গাছ তিন ধরনের হয়: স্ত্রী, পুরুষ এবং উভলিঙ্গ বা হিজড়া। প্রত্যেকটি গাছের বৈশিষ্ট্য আলাদা, এগুলোর ফুল এবং ফলের বৈশিষ্ট্যও আলাদা হয়। তবে পেঁপে গাছের লিঙ্গ পরিবর্তন হতে পারে। পুরুষ গাছ হঠাৎ করে ফল দিতে শুরু করতে পারে। আবার উভলিঙ্গ গাছও যথেষ্ট সূর্র র আলো পেলে সারা বছর ফল দেয়। ধারণা করা হয়, তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে পেঁপে গাছের লিঙ্গ পরিবর্তন হতে পারে। তবে ফুল না আসা পর্ন্ত পেঁপে গাছের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
পুরুষ পেঁপে গাছ
পুরুষ পেঁপে গাছ চেনা যায় এটি ফুল দেখে। এর ফুল টিউবের মতো লম্বা। পাতার ডাটার গোড়া থেকে ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা চিকন ডাটা বের হয়। ডাটার মাথায় থোকা বেঁধে ধরে ফুল। এক একটি ফুলে পুংকেশর বা পুরুষ যৌনাঙ্গ এবং গর্ভকেশর বা স্ত্রী যৌনাঙ্গ দুটোই থাকে। তবে এ গর্ভকেশর কোনো কাজের নয়, বন্ধ্যা। এ কারণে পুরুষ গাছে ফল ধরে না। তবে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুরুষ গাছের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য) এমনটি হতে পারে। এরকম আবহাওয়ার সময় পুরুষ গাছ উভলিঙ্গ বা হিজড়া গাছে পরিণত হতে পারে। তখন এর গর্ভাকেশর সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন ফুলে পরাগায়ন হয় এবং ফল উৎপন্ন হয়। কখনো কখনো একটি পেঁপে গাছ সাময়িক সময়ের জন্য শুধু পুরুষ ফুল দেয়, খুব দ্রুতই গাছটি স্ত্রী বা হিজড়া গাছে পরিণত হয়। আবার অনেক সময় পুরুষ গাছে আগা কেটে দিলেও সেটি স্ত্রী গাছে পরিণত হয়। তবে এ কৌশল সব সময় যে কাজে দেবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
স্ত্রী পেঁপে গাছ
স্ত্রী গাছে পাতার গোড়ার উপরে থোকায় থোকায় বা আলাদা ভাবে ফুল ফোটে। তবে এ থোকা পুরুষ গাছের ফুলের থোকার চেয়ে ছোট হয়। স্ত্রী গাছের ফুল পুরুষ গাছের ফুলের চেয়ে বড় হয় তবে ফুলের ডাটাটি পুরুষ গাছের তুলনায় অনেক ছোট। স্ত্রী গাছের ফুলে পুংকেশর থাকে না। তবে সক্রিয় গর্ভকেশর থাকে, এ কারণে পরাগায়ন হলে ফল উৎপন্ন হয়। স্ত্রী গাছের পেঁপে হয় সবুজ বর্ণের এবং ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, ভেতরের অংশ সাদা, পাকলে হলুদ বা গাঢ় কমলা রঙের, বীজ কালো। স্ত্রী পেঁপের ফুলে পরাগযোগ না হলেও ফল উৎপন্ন হতে পারে তবে সে ফলে বীজ হয় না।
উভলিঙ্গ বা হিজড়া পেঁপে গাছ
উভলিঙ্গ পেঁপে গাছের ফুলে পুংকেশর ও গর্ভকেশর অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ উভয় যৌনাঙ্গ থাকে। আর দুটি যৌনাঙ্গই সক্রিয় থাকে। এ কারণে উভলিঙ্গ পেঁপে গাছে ফল হয়। এধরনের ফল ধরতে ফুলে পরাগযোগেরও দরকার পড়ে না। উভলিঙ্গ পেঁপে গাছ কিন্তু পুরুষ গাছের মতো লিঙ্গ পরিবর্তনও করতেও পারে। গরমকালে বা গাছের আগা কেটে দিলে হিজড়া গাছ স্ত্রী গাছে পরিণত হতে পারে।
অনেক সময় না বুঝে হিজড়া গাছ কেটে ফেলা হয়। কাটার আগে ফল আসা পর্ন্ত অপেক্ষা করা ভালো। অবশ্য বাণিজ্যিক বাগানের জন্য হিজড়া গাছ লাভজনক নয়।
0 Comments