লক্ষ্মীর গু আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থা |
লক্ষ্মীর গু বা ভুয়া ঝুল, ইংরেজিতে বলে False Smut। উস্টিলাজিনোইডিয়া ভাইরেন্স (Ustilaginoidea virens) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বিশেষ করে আমন ধানে এ রোগ বেশি দেখা যায়। যে বছর বেশি কুয়াশা হয় সেবছরই ধানে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে এ রোগের কারণে ধান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
রোগের বিস্তার
ধানে ফুল আসার সময় থেকে, দুধ অবস্থার পর অথবা ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগ হতে পারে। ধানের ফুল আসার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত এবং জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সারের ব্যবহার করলে রোগের প্রকোপ বেশি হয়।
রোগের কারণ
ক. যেসব এলাকায় বাতাসে আপেক্ষিত আর্দ্রতা বেশি (৯০% এর বেশি) এবং তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সেসব এলাকায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি দেখা যায়
খ. বৃষ্টি, উচ্চ আর্দ্রতা, মাটিতে অতি মাত্রায় নাইট্রোজেন কনটেন্ট (বিভিন্ন ধরনের নাইট্রেট বা নাইট্রোজেন যৌগ) এ রোগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
গ. বাতাসের মাধ্যমেও এ ছত্রাকের স্পোরগুলো ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পার্শ্ববর্তী ধান গাছ এতে আক্রান্ত হতে পারে।
ঘ. লক্ষ্মীর গু তখনই দৃষ্টিগোচর হয় যখন ধানের শীষ বেরিয়ে আসে। ধানের ফুল আসার সময়ও এ রোগ আক্রমণ করতে পারে।
রোগের লক্ষণ
ধানের ছড়ার কিছু ধানে বড় গুটিকা দেখা যায়। গুটিকার ভেতরের অংশ হলদে-কমলা রঙ ও বহিরাবরণ সবুজ রঙের হয়।
বহিরাবরণ পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কালো হয়ে যায়। কচি গুটিকাগুলো ১ সেন্টিমিটার এবং পরিপক্ব অবস্থায় আরও বড় আকারের হতে পারে।
এক রকমের আঠা জাতীয় পদার্থ থাকার জন্য গুটিকা থেকে ক্ল্যামাইডোস্পোর জাতীয় অনুজীব সহজে বের হয় না।
সাধারণত কোনো শীষে কয়েকটা ধানের বেশি আক্রমণ হতে দেখা যায় না।
পূর্ণবয়স্ক স্পোর |
ধানের রেণুমঞ্জুরীতে (ফুল আসা দানা) নরম মখমলের মতো গুটি দেখা যাবে। এটিকে বলে স্পোর বল।
প্রাথমিক অবস্থায় স্পোর বলগুলো কমলা রঙের হয়। পরে সবুজাভ কালো রঙ ধারণ করে।
লক্ষ্মীর গু রোগে আক্রান্ত ধান গাছের কিছু শীষের কয়েকটি দানা স্পোর বলে ঢেকে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি শীষের সবকটি দানা আক্রান্ত হয় না। আক্রান্তগুলো বাদে বাকি দানাগুলো স্বাভাবিক থাকে।
প্রথমের দিকে স্পোরগুলো কিছুটা থেবড়ানো, মসৃণ হয় এবং একটি পাতলা পর্দা (মেমব্রেন বা ঝিল্লি) দিয়ে আবৃত থাকে।
স্পোরগুলো যখন বড় হয় এ পর্দা ফেটে যায়।
এ রোগের গুরুত্ব
ধানের ফুল আসার সময় এ রোগ আক্রমণ করে। ফলে ধানের গর্ভাশয় নষ্ট হয়ে যায়। এতে সেই ধানের আর দানা হয়। দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণটি ঘটে শীষের দানাগুলো যখন পূর্ণতা পেতে চলে তখন। এতে দানাটি চক পেন্সিলের মতো মুড়মুড়ে হয়, এতে শস্যদানার ওজন কমে যায়। এ রোগের আক্রান্ত বীজের অঙ্গুরদগম হার ৩৫% অবধি কমে যেতে পারে। আর্দ্র আবহাওয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে এ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং ২৫% ফলন কমে যেতে পারে।
আক্রান্ত শস্যদানা |
ক. ধানের জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন
খ. ধান কাটার পর আক্রান্ত শস্যদানা, শীষ এবং ধান গাছের অবশেষে সরিয়ে ফেলুন
গ. সেচের ধান (বোরো) হলে অল্টানেটি অয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং (এডব্লিউডি) পদ্ধতিতে জমির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করুন। জমিতে বেশি পানি বেঁধে রাখবেন না।
ঘ. সম্ভব হলে কম চাষে (কনজারভেশন টিলেজ) নিরবচ্ছিন্নভাবে ধান চাষ করুন
ঙ. নাইট্রোজেন সারের (ইউরিয়া) ব্যবহার পরিমিত রাখতে হবে
চ. বিশুদ্ধ সনদপ্রাপ্ত বীজ ব্যবহার করুন
ছ. সবচেয়ে ভালো হয় এ রোগ প্রতিরোধী জাত আবাদ করা
রোগের প্রতিকার
সঠিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। আক্রান্ত গাছ বা শীষ তুলে ফেলা এ রোগ দমনের সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে এটি সকাল বেলা আক্রান্ত শীষ পলিব্যাগে সাবধানে আবদ্ধ করে গাছ তুলতে হবে যাতে স্পোর ছড়াতে না পারে। জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- অটোস্টিন বা নোইন ১.৫ গ্রাম/লিটার হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
0 Comments