বাদামি দাগ রোগ |
রোগের কারণ
বাইপোলারিস ওরাইজি (Bipolaris oryzae) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। মাটিতে পুষ্টি উপাদানের অভাব বা পানির অভাব হলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার অতিরিক্ত ইউরিয়ার প্রয়োগও এ রোগের সংক্রমণ ডেকে আনতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ
বাদামি দাগ রোগের কারণে শুধু যে ফলন কমে তা নয়, ধানের কোয়ালিটিও অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়। এ রোগের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৫% ফলন কম হয়। রোগের আক্রমণ খুব মারাত্মক হলে ফলন ৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আক্রান্ত বীজ থেকে গজানো চারার ফ্যাকাশে হয় এবং ১০-৫৮% চারা মরে যেতে পারে। এর চারার ধানের ওজন কম হয়। শীষে দানার সংখ্যাও কমে যায়। ১৯৪৩ সালে বাংলার দূর্ভিক্ষের জন্য এ রোগও অনেকখানি দায়ী বলে মনে করা হয়।
রোগের লক্ষণ
পাতায় প্রথমে তিলের দানার মতো ছোট ছোট দাগ পড়ে। দাগগুলো ক্রমেই বড় হয়ে মাঝখানে সাদা ও কিনারা বাদামি হয়ে যায়।
একাধিক দাগ মিলে বড় দাগ সৃষ্টি হয়ে পাতাটিকে মেরে ফেলতে পারে। ধানের পাতার চেয়ে রোগটি বীজে বেশি দেখা যায়। রোগ আক্রান্ত গাছে অপুষ্ট বীজ হয় ও বাদামি বর্ণ হয়।
রোগের আক্রমণের শুরুতে ছোট ছোট বাদামি স্পট বা ফোঁটা দেখা যায়। এটি পরে সিনিন্ডার বা ডিম্বাকৃতির অর্থাৎ ঠিক তিলের দানার মতো হয়
আক্রান্ত ধানের পাতার পরণতি: সুস্থ পাতা থেকে মৃত পাতা |
ধানের শীষ (মঞ্জুরী) ও শীষদণ্ডেও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। তখন আক্রান্ত অংশ বাদামি রঙ ধারণ করে
আক্রান্ত পাতা ও শীষ |
বের হওয়ার আগেই আক্রান্ত শীষ |
আক্রান্ত ধান ও চাল |
রোগ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ
২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা
৮০ শতাংশের ওপর বাতাসের আর্দ্রতা
অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া) প্রয়োগ
৮-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পাতা ভেজা থাকা। অর্থাৎ অতিরিক্ত কুয়াশা ও টানা বৃষ্টির সময় এ রোগের আক্রমণ বেশি হতে পারে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
বাদামি দাগ রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো মাটির পুষ্টি ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া। নিয়মিত মাটির পুষ্টি অবস্থা পরীক্ষা করুন ও প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করুন। মাটিতে সিলিকনের পরিমান খুব কম হলে ধান রোপনের জন্য জমি তৈরির সময় ক্যালসিয়াম সিলিকেট প্রয়োগ করুন।
সুস্থ বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হবে
বীজ বপনের আগে গরম পানিতে (৫০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ভিজে রাখতে হবে) শোধন করতে হবে
কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে
জমিতে যথেষ্ট পরিমানে ও নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে
জমিতে সঠিক পরিমাণ নাইট্রোজেন ও পটাশ সার ব্যবহার করলে রোগ কমে যায়
সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পানির টান পড়লে রোগের বিস্তার বাড়বে।
রোগর প্রতিকার
জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে
ম্যানকোজেব (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা এডিফেনফোস (প্রতি লিটার পানি ১ মিলি লিটার) দুই থেকে তিনবার (১০-১৫ দিন দিন পরপর) স্প্রে করতে হবে
ধানে ফুল আসার আগে এবং ফুল আসার পরে সকাল বা বিকালে ওষুধ স্প্রে করতে হবে।
আরো পড়ুন
বায়ো এজেন্ট: পোকা দিয়ে ফসলের পোকা দমন
ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার (সচিত্র)
আলুর লেইট ব্লাইট বা মড়ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার (সচিত্র)
0 Comments