সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

খামারির অসাবধানতায় হয় মারাত্মক অ্যাসপিরেশন বা ড্রেঞ্চিং নিউমোনিয়া

aspiration or drenching pneumonia of cattle
অ্যাসপিরেশন বা ড্রেঞ্চিং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত গরু

খামারি, খামারের কর্মী বা এমনকি চিকিৎসকের সামান্য অসাবধানতার কারণে পশুর এই জটিল রোগটি হতে পারে। এই রোগে তীব্র লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই পশুর মৃত্যু হতে পারে। এর নাম অ্যাসপিরেশন বা ড্রেঞ্চিং নিউমোনিয়া (Aspiration/ Drenching pneumonia) ।

এটা কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া বা অন্য কোনো মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট রোগ নয়। তবে রোগটি হলে মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। তখন পশুকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হয় গবাদিপশুকে জোর পূর্বক তরল জাতীয় খাবার বা ওষুধ খাওয়ালে। আবার দুর্বলতা বা অসুবিধার কারণে পশুর কোনো গিলতে গিয়ে শ্বাসনালীতে ঢুকে যেতে পারে। তখন শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয় ও সৃষ্ট প্রদাহ থেকে ক্ষত সৃষ্টি ও পানি জমে ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় । বেশ কিছু ক্ষেত্রে পশুর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই মারা যায়।

আরেকটু বিস্তারিত বললে, থেরাপিউটিক এজেন্টের (বিভিন্ন ওষুধ বা টনিক) অদক্ষ বা অসাবধান ব্যবহারের কারণে বড় প্রাণীদের মধ্যে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হতে পারে।  ড্রেঞ্চ বা ডোজ সিরিঞ্জের মাধ্যমে তরল খাবার বা ওষুধ অদক্ষ ব্যক্তির হাতে বা অসাবধানতার সাথে দিলে সেটি পশুর ফুসফুসে চলে যেতে পারে।

এ কারণে ড্রেঞ্চ বা ডোজ সিরিঞ্জের মাধ্যমে তরল খাওয়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, পশু যতোখানি এবং যে গতিতে খাবার গিলতে পারে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বা বেশি দ্রুত খাবার পুশ করা যাবে না।

এছাড়া পশুর জিহ্বা বাইরে টেনে বের করা অবস্থায়, মাথা উঁচু করে রাখা অবস্থায়, অথবা যখন পশু কাশি দেয় বা হাঁকডাক দেয় তখন ড্রেঞ্চিং করা খুবই বিপজ্জনক।

ডিপথেরাইটিক স্টোমাটাইটিস/ল্যারিনজাইটিসে আক্রান্ত হলে বাছুর এবং ভেড়ার বাচ্চা শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এমন বস্তু নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে টেনে নিতে পারে। ম্যাস্টাইটিস (দুধ জ্বর) চিকিৎসার পর গবাদিপশুর অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হলে খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে। শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করা বস্তুর মধ্যে যদি ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে নিউমোনিয়া আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। 

শ্বাসনালী ভালোভাবে সুরক্ষিত না রেখে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করলে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়ার লক্ষণ

সারধাণত শ্বাসতন্ত্রে ফরেন বডি প্রবেশের ১-২ দিনের মধ্যেই অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। উন্মুক্তভাবে পালন করলে আক্রান্ত গরু পাল থেকে আলাদা থাকে।

আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (পাইরেক্সিয়া)। জ্বর ১০৪-১০৫ (৪০-৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ফারেনহাইট হতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ঘন ঘন শ্বাস, লম্বা শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা, মুখে ব্যথার ভাব ফুটে ওঠা, পিঠ বা শিরদাঁড়া বাঁকা ধনুকের মতো হওয়া, খাবারে অরুচি বা খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে, বিষণ্নতা, বিষাক্ত শ্লেষ্মা ঝিল্লি বের হবে, তলপেট দ্রুত উঠানামা করবে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাবে (৪০-৬০ শ্বাস/মিনিট)।

নাক দিয়ে স্রাব বা শ্লেষ্মা বের হয়। কখনও কখনও লালচে বাদামী বা সবুজ রঙের হতে পারে। দুধের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমতে কমতে শূন্যে নেমে যেতে পারে। 

১. রোগের প্রথম পর্যায়ে জ্বর এর প্রকোপ বেশি থাকবে পরবর্তী জ্বর কমে আসবে।

২.খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিবে এক পর্যায়ে খাবে না।

৩. শ্বাস নেওয়া সময় ঘড় ঘড় আওয়াজ করবে, নাক উপরে নিচে উঠানামা করবে। তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। মুখে হা করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।

৪. অনেক ক্ষেত্রে পেট ফাঁপতে পারে।

৫. ফুসফুসের প্রদাহ কারনে পশুর অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে, উঠা বসা করবে।

অ্যাসপিরেশন বা ড্রিঞ্চিং নিউমোনিয়ার চিকিৎসা

এই ক্ষেত্রে নিমোনিয়ার যে ওষুধগুলো ব্যবহার হয় সাধারণত ওই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করে থাকি। 

অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রাথমিক ভাবে যেসব রোগ পশুর দুর্বলতা সৃষ্টি করে সেগুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন; আঘাত জনিদ দুর্বলতা, টক্সিমিয়া (ম্যাস্টাইটিস, মেট্রাইটিস), বিপাকীয় সমস্যা ইত্যাদির কারণে পশু দ্রুত দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এচাড়া, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ঘাটতি জনিত দুর্বলতা দেখা দিলে সেগুলো প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া সবচেয়ে বেশি হয় মুখে তরল খাবার বা ওষুধ দেওয়ার সময় অদক্ষতা এবং অসাধানতার কারণে। সুতরাং বাধ্য না হলে মুখে খাবার বা ওষুধ না দেওয়া উচিত। আর দিতে চাইলে অবশ্যই দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়াতে হবে। 

চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্ব থাকবে পশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা। এরপর মাইক্রোবিয়াল ইফেকশন (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সংক্রমণ) প্রতিরোধ করা। ওষুধের মধ্যে পেনিসিলিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (অ্যান্টিবায়োটিক) কমপক্ষে ১০-১৪ তিন বা সম্পূর্ণ উপশমের জন্য ২১-২৮ দিন প্রয়োগ করতে হতে পারে।

হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য সহায়ক যত্নও গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট পুষ্টি যাতে পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মুখে বা শিরার মাধ্যমে তরল পুষ্টি দিতে হতে পারে।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি থেরাপিও পশুর ব্যথা এবং টক্সেমিয়া মোকাবেলায় সহায়ক হয়।

হাইপোক্সেমিয়া নির্ণয় করা করে গুরুতর ক্ষেত্রে বা নবজাতকের ক্ষেত্রে আর্দ্রতাযুক্ত অক্সিজেন সরবরাহের দরকার হতে পারে।

শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে আক্রান্ত প্রাণী ভালো বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। 

ওষুধ

১.Ceftiofur_Sodium...... 1gm ১২ ঘণ্টা পর পর ৩ দিন, প্রয়োজনে ৫ দিন দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে দৈহিক ওজন বিবেচনা করতে হবে।

২. Lacisse  (ল্যাসিস) দৈহিক ওজন অনুসারে সকাল বিকাল তিন দিন।

৩. Kitoprofen, দৈহিক ওজন অনুসারে দৈনিক এক বার। 

৪. অ্যান্টি হিস্টামিন।

অনেকে আবার ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে বাষ্প থেরাপির কথাও বলেন।

পানি ও তারপিন তেল (আনুপাতিক হার ৭০:৩০) মিশিয়ে পাতলা কাপরের সাহায্যে বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে পশুকে দিলে খুব ভালো কাজে দেয়।

রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই নিকটবর্তী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

Post a Comment

0 Comments