সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

খরগোশের গোশত হালাল নাকি হারাম, খরগোশের বিভিন্ন জাত

is rabbit meat halal. খরগোশ খাওয়া কি জায়েজ?


মহান আল্লাহ তাআলার সব বিধান তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্য। যদিও বান্দা সব সময় তাঁর প্রতিপালকের দয়া, কল্যাণকামিতা উপলব্ধি করতে পারে না। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এ বিধানও দিয়েছেন যে তারা যেন সেগুলোর মধ্যে হালাল খাদ্যই গ্রহণ করে এবং হারাম বস্তু ত্যাগ করে। কেননা হারাম খাদ্যে কেবল পরকালীন অকল্যাণই নয়, বরং তাতে রয়েছে পার্থিব ব্যাপক ক্ষতি। মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে রাসুল (সা.)-এর পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘যিনি তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ হালাল করবেন এবং নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ হারাম করবেন।’ (সুরা আরাফ : ১৫৭)

খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ একটি নেয়ামত হলো, আমিষ জাতীয় খাবার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তু, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে শীত থেকে বাঁচার উপকরণ, তা ছাড়া আরো বহু উপকার রয়েছে এবং তা তোমরা খাদ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল : ৫)

পশু-পাখির ক্ষেত্রেও ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হালাল আর কিছু হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন, বাস্তবেও সেগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার যোগ্য। কেননা নিষিদ্ধ প্রাণিকুলকে দেখা যায়, কখনো তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক, অথবা নাপাক, নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত, যা একজন জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন মানুষ কখনো খেতে পছন্দ করে না। একটু চিন্তা করলে সেগুলোর মধ্যে আরো অনেক নিষিদ্ধের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের জীবিকারূপে যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দিয়েছি, তা থেকে খাও এবং আল্লাহর শোকর আদায় করো, যদি সত্যিই তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করে থাকো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত এবং ওই সব প্রাণী, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়।’ (সুরা বাকারা : ১৭২, ১৭৩)

প্রাণিজগতের হালাল-হারামের বিধানাবলী

সাধারণত প্রাণী দুই ধরনের : স্থলজ প্রাণী ও জলজ প্রাণী। 

জলজ প্রাণী খাওয়ার বিধান

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত খেতে পারো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৪)

এই আয়াতে ‘তাজা গোশত’ শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) লিখেছেন, ‘তাজা গোশত’ হলো সমুদ্র থেকে শিকার করা মাছ। (তাফসিরে তাবারি ১৭/১৮০)

হাদিস শরিফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সমুদ্রপথে আসা-যাওয়া করি এবং সঙ্গে সামান্য মিঠা পানি নিই। যদি আমরা তা দিয়ে অজু করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে অজু করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমুদ্রের পানি পবিত্র ও তার মৃত জীব হালাল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

এই হাদিসে বর্ণিত পানির মৃত জীব আসলে কী? এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি রাসুল (সা.)। তবে অন্য হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য দুই ধরনের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও টিড্ডি (পঙ্গপাল), আর দুই প্রকারের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১৪)

মাছ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হালাল

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো আলোকে সব ইমামের ঐকমত্যে পানির জীবের মধ্যে মাছ খাওয়া হালাল। এমনকি মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল, চাই তা যে কারণেই মারা যাক। যেমন—পানি থেকে ওঠানোর কারণে, কোনো আঘাত পাওয়ায়, পানিতে কোনো বিষ মিশানোর কারণে বা সরাসরি সূর্যের তাপ পড়া ইত্যাদি কারণে মারা যায় তা নষ্ট হওয়ার আগে খাওয়া হালাল।

তবে হ্যাঁ, যে মাছ বিনা কারণে মারা যাবে তা খাওয়া মাকরুহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সাগরে নিক্ষেপকৃত মাছ, শুকনায় উঠে যাওয়া মাছ খাও। আর বিনা কারণে মৃত মাছ খেয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮১৫)

অপর বর্ণনায় জাবের (রা.) বলেন, ‘বিনা কারণে ভেসে ওঠা মৃত মাছ খেয়ো না।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৮৬৬২)

মাছের সংজ্ঞা

মাছের সংজ্ঞা ফিকহবিদদের কাছে নির্ধারিত নেই; বরং সর্বসাধারণ বা মুসলিম মাছ বিশেষজ্ঞদের কাছে মাছ হিসেবে যে জলজীব পরিচিত, শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটিই মাছ বলে গণ্য হবে এবং তা খাওয়াও হালাল হবে। আর যে জলজীব মাছ বলে পরিচিত নয়, তা হালাল হবে না। মুফতি আমিমুল ইহসান মুজাদ্দিদি (রহ.) লিখেছেন, ‘মাছ হলো মানুষের মধ্যে যে জলজ প্রাণীকে মাছ বলে গণ্য করা হয়। এটি এমন এক জলজ প্রাণী, যার অসংখ্য প্রকারভেদ ও আকৃতি রয়েছে।’ (আত্তারিফাতুল ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)

মাছ ছাড়া অন্য জলজ প্রাণী খাওয়া হালাল নাকি হারাম

জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া অন্য সব প্রাণী খাওয়া জায়েজ নাকি নাজায়েজ এ নিয়ে ফকিহদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে।

যদি (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৩৫) ইমাম আবু হানিফা ও সুফিয়ান সাওরি (রহ.) ও আরো অনেক ফকিহ মাছ ছাড়া বাকি জলজ প্রাণীকে হারাম বলেছেন। ইবনে হাজর আসকলানি (রহ.)-এর মতে, এটি শাফেয়ি মাজহাবেরও নির্ভরযোগ্য অভিমত। (ফাতহুল বারি ৯/৪১৯)

মহান আল্লাহ সফল মুমিনদের গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘এবং নিজেদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করে আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

এই আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে মাছ ছাড়া কাঁকড়া, ব্যাঙ ইত্যাদি খাওয়া নাজায়েজ। যদিও পঙ্গপালের মতো পোকা ও চিংড়ি খাওয়ার ব্যাপারে কোনো ইসলামে কারো কোনো আপত্তি নেই।

যেমন, ইমাম মারগিনানি (রহ.) লিখেছেন, জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া কোনো প্রাণী খাওয়া যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করেছেন, আর মাছ ছাড়া পানির সব প্রাণীই নিকৃষ্ট। (হেদায়া ৪/৩৫৩)

আবার হাদিসে এসেছে, জনৈক ডাক্তার ওষুধের মধ্যে ব্যাঙ মিশ্রিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে অনুমতি চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭১)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় কিছু ফকিহ-মুহাদ্দিস বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে এ জন্য নিষেধ করেছেন যে যেহেতু ব্যাঙ হারাম প্রাণী, তাই তা হত্যা করলে তা খাওয়া বৈধ হবে না, যখন হত্যা করলে খাওয়া বৈধ হবে না, তাহলে অকারণে একটি প্রাণী হত্যা করে লাভ কী? (আহকামুল কোরআন, জাসসাস ৪/১৯০, বিনায়া ১১/৬০৬)

অবশ্য নিকৃষ্ট বা ভক্ষণ যোগ্য প্রাণীর ধারণা দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি ভেদে আলাদা হয়। যেমন, পঙ্গপালের মতো পোকামাকড় খাওয়ার চল আছে ইন্দোচীন ও আফ্রিকার দেশে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া (ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান) বা আরবের মানুষকে পঙ্গপাল ভেজে সামনে পরিবেশন করলে বমি করে দিতে পারে।

আবার সমুদ্র তীরবর্তী মানুষের (চীন, কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল) খাবারের মধ্যে অংসখ্য প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী থাকে। তারা এগুলোকে নিকৃষ্ট তো মনে করেনই না, বরং উৎকৃষ্ট পদ হিসেবেই তারা খেয়ে থাকেন। 

ফলে সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়ার বিধান দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রুচির ওপর ভিত্তি করে ফতোয়া দেওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে সারকথা হলো, এটি প্রমাণসিদ্ধ কথা যে জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ খাওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নেই। মাছের বৈধতার মধ্যে কোনো ফকিহের কোনো দ্বিমত নেই। এ ছাড়া অন্যগুলোর বৈধতা-অবৈধতার ব্যাপারে অনেকে দ্বিমত করেছেন। তবে অনেকাংশেই ব্যক্তিগত, দেশীয় সংস্কৃতি ও রুচির ভিত্তিতে ফতোয়া এসেছে বলে মনে হয়। কেউ চাইলে হালাল-হারাম নিয়ে সন্দেহ হলে, সেখানে সতর্কতামূলক হারাম ও অবৈধতার দিকটিকেই প্রাধান্য দিতে পারেন। 

স্থলজ প্রাণী তিন প্রকার : এক. ওই সব প্রাণী, যার কোনো রক্ত নেই, যেমন মশা-মাছি, মাকড়শা, পিঁপড়া, টিড্ডি ইত্যাদি।

দুই. ওই সব প্রাণী, যার রক্ত থাকলেও তা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট প্রাণী নয়, যেমন- সাপ, ইঁদুর ইত্যাদি। 

উভয় প্রকার প্রাণীর মধ্য থেকে শুধু রক্তবিহীন প্রাণী টিড্ডি খাওয়া হালাল আর বাকি সব ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট হওয়ায় সেগুলো খাওয়া হারাম। এর পেছনে অবশ্য ফকিহদের একটিই যুক্তি এসব প্রাণী তাঁদের কাছে ঘৃণিত বা নিকৃষ্ট বলে মনে হয়েছে। এটি তাঁদের একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।

তিন. ওই সব প্রাণী, যা প্রবাহিত রক্তবিশিষ্ট হয়, যেমন- সব ধরনের পাখি ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু। সেগুলো আবার দুই প্রকার : প্রথমত, পাখি। পাখিকুলের মধ্যে যেসব পাখি থাবা ও নখরবিশিষ্ট হয় যেমন- চিল, শকুন, বাজ, ঈগল ইত্যাদি খাওয়া মাকরুহে তাহরিমি। এটিও নিষিদ্ধের অন্তর্ভুক্ত, কেউ বলে হারামের কাছাকাছি। আর যেগুলো নখরবিশিষ্ট নয়, অর্থাৎ যা শুধু ঠোঁটের সাহায্যে খাবার গ্রহণ করে- এগুলো খাওয়া হালাল। এর মধ্য থেকে ওই সব কাক, যা শুধু নাপাকি ভক্ষণ করে সেগুলোও মাকরুহ; কিন্তু যেসব কাক বেশির ভাগ শস্যদানা, পোকামাকড় খায় সেগুলো হালাল!

দ্বিতীয়ত, পশু। বিধানগত দিক দিয়ে পশু দুই প্রকার : হিংস্র পশু, যা থাবা মেরে আক্রমণ করে খায়। সেসব পশু খাওয়া হারাম। যেমন- বাঘ, সিংহ, শিয়াল, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। 

দ্বিতীয় প্রকার হলো অহিংস্র পশু। অহিংস্র পশুর মধ্যে যেগুলোর সর্বাঙ্গ পাক, সেগুলো খাওয়া হালাল। যেমন- গৃহপালিত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা। অনুরূপ বন্য পশুর মধ্যে বন্য গরু, হরিণ, খরগোশ, বন্য গাধা। আর যেগুলোর সর্বাঙ্গ নাপাক, তা খাওয়া হারাম। যেমন- শূকর। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত।’ (সুরা বাকারা : ১৭৩)

যেসব প্রাণী খাওয়া মাকরুহ

গৃহপালিত গাধা ও সব ধরনের ঘোড়া খাওয়া মাকরুহ। এ ছাড়া হালাল প্রাণীর মধ্য থেকেও যেগুলো শুধু নাপাকি খেতে অভ্যস্ত, সেগুলো খাওয়াও মাকরুহ। 

(বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৫-৪১, আল মাওসুয়াতুল ফিকিহিয়্যাহ ৫/১৩২-১৪৮)

খরগোশের গোশত খাওয়ার বিধান

খরগোশের গোশত খাওয়া জায়েয। আনাস (রা.) বলেন, ‘মাররূয যাহরান’ নামক স্থানে আমরা একটি খরগোশ ধাওয়া করলাম। সাথের লোকজন অনেক চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং আবু তালহার নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি সেটিকে যবেহ করলেন ও তার রান দুটি কিংবা তার সামনের পা দুটি নবী করীম (সা.)-এর জন্য হাদিয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তা গ্রহণ করলেন।’ (বুখারী , মুসলিম; মিশকাত হা/৪১০৯)

অন্য হাদীসে এসেছে, এক গ্রাম্য ব্যক্তি ভুনা করা খরগোশ ও রুটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করে বললেন, আমি এর হায়েজ হতে দেখেছি। তখন সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, কোনো সমস্যা নেই, তোমরা খাও। এবং গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, খাও। (নাসায়ী, হাদীস নং ২৪২৭)

এখানে খরগোশটির পা কেমন ছিল তা জানা যায় না। অন্য কোনো হাদীসেও পায়ের বর্ণনা পাওয়া যায় না।

যদিও অনেকে বিড়ালের মতো পা বিশিষ্ট খরগোশের থাবা থাকায় তা খাওয়া জায়েজ হওয়া-না হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে থাবা থাকা সত্ত্বেও হিংস্র না হওয়ায় উলামায়ে কেরাম এ ধরনের খরগোশ খাওয়া জায়েজ বলেছেন।

অনেকে বলেন, শুধু বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট (ছাগল বা হরিণের পায়ের মত) খরগোশের গোশত খাওয়া হালাল,আর বিড়ালের পায়ের মতো থাবা বিশিষ্ট খরগোশ হারাম। এটি একটা প্রচলিত কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। 

Canadian Executive Service Organization (CESO) এর বর্ণনা মতে, বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট খরগোশের অস্তিত্ব একটা কাল্পনিক ও রূপকথার গল্প। তাদের মতে Lagomorphs শ্রেণীর ইউরোপিয়ান বন্য খরগোশের (Oryctolagus cuniculus) পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট নয়, থাবা বিশিষ্ট। প্রকৃতিগত ভাবেই খরগোশ বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট প্রাণী নয়। প্রকৃত পক্ষে ছাগল বা হরিণের পায়ের মতো বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট কোন জাতের খরগোশের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নাই বা কোনো কালে ছিলও না। 

প্রাকৃতিক ভাবে বা কৃত্রিম উপায়ে যদি হরিণের সঙ্গে খরগোশের মিলন ঘটানো (Species hybridization) হয়, তবেই কেবল হরিণ ও খরগোশের মাঝামাঝি এক ধরনের বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট উদ্ভট প্রাণীর জন্ম হতে পারে, যা খচ্চর জাতীয় প্রাণীর মতোই বন্ধ্যা হয় । 

অন্যদিকে, পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশের বনজঙ্গলেও এক সময় ছোট জাতের হরিণ (Pudu) বাস করত যারা এরা শিকারী প্রাণীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কান দুটো খাড়া রেখে সদা সতর্ক থাকত। এরা কখনো কখনো খরগোশের মতো চুপিসারে বসে বসে ঘাস, লতাপাতা খেত। দূর থেকে দেখে কেউ এদের খরগোশ বলে ভুল করতে পারেন।

সাম্প্রতিক কালে মারা নামের ইঁদুর গোত্রীয় এক ধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব মিলেছে, যাদের পিছনের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট এবং দেখতে কিছুটা খরগোশের মতো। যাই হোক, কোনো প্রাণীর পায়ের গঠনের ওপর ভিত্তি করে হারাম-হালাল নির্ধারিত হয় না। কেননা শূকরের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের জন্য এর গোশত খাওয়া হারাম করা হয়েছে। 

মাছ ব্যতীত মৃত প্রাণির গোশত, শূকর ও গৃহপালিত গাধার গোশত এবং প্রাণীর রক্ত, ইত্যাদি খাওয়া হারাম (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ৫৩)। 

এছাড়াও যেসব হিংস্র পশু পাখি লম্বা ছেদন দাঁত বা বিষ দাঁত অথবা থাবা বা নখর দ্বারা অন্য পশু পাখি শিকার করে বা পঁচা গলা জীবজন্তু ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে তাদের গোশত খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম। 

এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে খরগোশ একটা অত্যন্ত শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির প্রাণী যা মোটেই হিংস্র নয়। এরা ছাগল ভেড়া ও গরু মহিষের মতোই সম্পূর্ণ তৃণভোজী প্রাণী অর্থাৎ ঘাস, লতাপাতা, গাছের কচি অংশ, শাক সবজি খেয়ে জীবন ধারণ করে। এরা কখনোই অন্য কোনো পশু পাখি শিকার করে না, এমনকি পোকা মাকড় পর্যন্তও খায় না। সুতরাং উপরোক্ত যুক্তি প্রমাণাদি বিশ্লেষণে বলা যায় যে, ইসলামী শরিআহ্ মোতাবেক আল্লাহর নামে জবাই করা খরগোশের গোশত খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল।

খরগোশের জাত

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ দেখা যায়৷ তার মধ্যে সাদা, কালো, ডোরা এবং খয়েরী রংয়ের খরগোশ বেশী৷ বাংলাদেশে প্রাপ্ত জাতসমূহ হচ্ছে ডার্ক গ্রে (নেটিভ), ফক্স, ডাচ, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড কালো, বেলজিয়াম সাদা এবং ছিনছিলা উল্লেখযোগ্য৷ 

ডার্ক গ্রে (নেটিভ)

উৎপত্তি : বাংলাদেশ  প্রাপ্তি স্থান :ঢাকা ও যশোরে গায়ের রং: গাঢ় ধূসর

ওজন : ২-৩ কেজি বৈশিষ্ট্য : এরা চালাক চতুর এবং ভাল তৃণভোজী৷

ফক্স    

উৎপত্তি : আমেরিকা প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা, যশোর গায়ের রং : কালো এবং অম্রবর্ণ দৈহিক ওজন : ২.৫ - ৩.১৭ কেজি বৈশিষ্ট্য : এরা ছোট আকৃতির এবং মাংশল জাত৷

ডাচ

উৎপত্তি : নেদারল্যান্ড প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা ।রং : সাদা দাগযুক্ত ধূসর রঙের ওজন : ১.৮ - ২.২৫ কেজি বৈশিষ্ট্য : মাংস উন্নতমানের এবং ল্যাব প্রাণী৷

নিউজিল্যান্ড লাল

উৎপত্তি : নিউজিল্যান্ড প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা, যশোর রং : লালচে সাদা

ওজন : ৩.৬০ - ৪.৫০ কেজি বৈশিষ্ট্য : এর মাংস খুবই উন্নতমানের, এরা তৃণভোজী এবং তুলনামূলক বেশি শান্ত৷

নিউজিল্যান্ড সাদা

উৎপত্তি : নিউজিল্যান্ড প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট

রং : সাদা

ওজন : ৪.০৫-৫.৪৪ কেজি

বৈশিষ্ট্য : মাংস খুবই সুস্বাদু, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভাল তৃণভোজী৷

নিউজিল্যান্ড কালো

উৎপত্তি : নিউজিল্যান্ড প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা, যশোর, খুলনা রং : কালো

ওজন : ৪- ৫.৪৪ কেজি বৈশিষ্ট্য : দ্রুত বর্ধনশীল, তৃণভোজী এবং এর মাংস খুবই সুস্বাদু৷

বেলজিয়াম সাদা

উৎপত্তি : বেলজিয়াম প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা রং : সাদা ওজন : ৩.৫২-৪.৭ কেজি বৈশিষ্ট্য : দ্রুত বর্ধনশীল, তৃণভোজী এবং মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু৷

 ছিনছিলা

উৎপত্তি : ফ্রান্স প্রাপ্তিস্থান : ঢাকা, যশোর ওজন : ২.৫০-২.৯৫ কেজি

বৈশিষ্ট্য : অত্যন্ত ভালো মানের মাংস উৎপাদনকারী এবং তৃণভোজী৷

Post a Comment

0 Comments