সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ছাগল পালন ম্যানুয়াল: বাচ্চা, বুড়ানি ও খাসির খাদ্য ও যত্ন

goat farming, black bengal goat
বিশ্বসেরা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। ছবি: পিক্সাবে ডটকম

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি ছাগলের মধ্যে প্রায় ৯৩ শতাংশ পালন করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরনের খামারিরা। অথচ গবাদি প্রাণির মধ্যে ছাগল পালন যতটা লাভজনক ও সহজ অন্যগুলো তেমন নয়। ছাগলের যেসব জাত আছে যেমন অ্যাংগোরা, বারবারি, বিটাল, যমুনাপাড়ি, সুরতি, মারওয়ারি, মালবারি, গাড্ডি, কাশ্মিরী, পশমিনা, সানেন, টুগেনবার্গ, অরপাইন, মোহসানা, ফিজি, অ্যাংলোলু। এসবের মধ্যে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল বিশ্বমানের বিশ্ব সেরা।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, চামড়া তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। তাছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক এবং তারা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রধানত গোশত ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। এজন্য আমরা খুব গর্ব করে বলতে পারি ব্ল্যাক বেঙ্গল আমাদের ছাগলের জাত। এদের গড় ওজন ১৫-২০ কেজি। কখনও কখনও ৩০-৩২ কেজি পর্যন্ত হয়।  দৈনিক ওজন বৃদ্ধির হার ২০-৪০ গ্রাম। 
 
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যে পাওয়া যায়। গায়ের রঙ সাধারণত কালো। তবে ধূসর সাদা বা বাদামি রঙেরও হতে পারে। গায়ের লোম ছোট ও মসৃণ। বছরে দুইবার এবং এক সাথে একাধিক বাচ্চা উৎপাদন করে। তবে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক কম। স্ত্রী ছাগল ৯-১০ মাস বয়স হলেই প্রজননের যোগ্য হয় এবং ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। বলা যায়,  গোশতের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল সর্বোৎকৃষ্ট। তবে দুধের জন্য যমুনাপারি, বারবারি ভালো। আর পশমের জন্য গাড্ডি ও অ্যাংগোরা ভালো। 

কেন ছাগল পালন 
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে সুবিধা 
০ পারিবারিক আয় বাড়ে; 
০ আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, পরিবারের গোশত ও দুধের চাহিদা মেটে; 
০ পারিবারিক আমিষের চাহিদা পূরণ হয়; 
০ চামড়া রফতানির মাধ্যমে অধিকতর আয় বাড়ে; 
০ ছাগলের দুধ খুবই পুষ্টিকর এবং এলার্জি উপসর্গ উপশমকারী; 
০ ব্ল্যাক বেঙ্গলের গোশত সুস্বাদু ও চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত; 
০ অধিক বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী; 
০ ছাগল পালনে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়, পারিবারিক যে কোনো সদস্য দেখাশোনা করতে পারেন; 
০ শয়ন ঘরে বা রান্না ঘরে কিংবা শয়ন ঘরের পাশে সাধারণ মানের কম খরচি ঘরে রাখা যায়; 
০ দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটে বলে অল্প সময়ে সুফল পাওয়া যায়; 
০ সব ধর্মালম্বী লোকদের জন্য ছাগলের গোশত সমাদৃত; 
০ ছাগল পালনে অন্যান্য পশুর মতো আলাদ বিশেষ গোচারণভূমির প্রয়োজন হয় না; 
০ ক্ষেতের আইলের, রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশের অনাবাদি জায়গার ঘাস লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে; 
০ বাড়ির আঙিনার আশপাশের গাছগাছড়ার লতাপাতা ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়; 
০ অল্প পুঁজিতে লালন পালন করা যায়; 
০ গবাদিপশুর মতো উন্নতমানের খাদ্য আবাসন বা অন্যান্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। 

ছাগলের জাত ও বৈশিষ্ট্য 
ব্ল্যাক বেঙ্গল 

সাধারণত বৈশিষ্ট্য:-গায়ের রং কালোতবে সাদা, সাদাকালো, খয়েরি কালো, খয়েরি ইত্যাদি হতে পারে । শরীরের আকার ছোট। গায়ের লোম মসৃণ ও ছোট । এদের কান ও শিং ছোট এবং ছাগীর তুলনায় পাঁঠার শিং তুলনামূলক বড় । 

দুধ উৎপাদন:- সাধারণত এ জাতের ছাগী দৈনিক ২০০-৩০০ মি.লি. দুধ দেয়, তবে উপযুক্ত খাদ্যও উন্নত ব্যবস্থাপনায় ছাগী দৈনিক ১.০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে । এদের দুগ্ধ প্রদানকাল সাধারণত ২-৩ মাস। 

মাংস উৎপাদন:- ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের ড্রেসিং হার শতকরা ৪৫-৪৭ভাগ । কিন্তু খাদ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য মাংসের পরিমাণ মোট ওজনের প্রায় ৫৫ ভাগ। এই জাতের ছগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু । 

বাচ্চা উৎপাদন:- সাধারণত ১২-১৫ মাস বয়সেই ছাগী প্রথম বাচ্চা দেয়। প্রথমবার শতকরা ৮০ভাগ ছাগী ১টি করে বাচ্চা দেয় । তবে দ্বিতীয়বার থেকে অধিকাংশ ছাগী ২টি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৩/৪টি করে বাচ্চা পাওয়া যায় । এ জাতের চামড়া বেশ উন্নত ও বিশ্বখ্যাত। 

যমুনাপাড়ি 

বৈশিষ্ট্য:- ভারতের এটোয়া জেলায় যমুনা পাড়ী ছাগলের উৎপত্তি ।বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ জাতের ছাগল পাওয়া যায় । এদের শরীরের রং সাদা, কালো , হলুদ-বাদামী বা বিভিন্ন রঙয়ের সংমিশ্রণে হতে পারে। কান লম্বা ঝুলানো ও বাঁকা। পা খুব লম্বা এবং পিছনের পায়ের পেছন দিকে লম্বা লোম আছে। এরা অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু ও চঞ্চল। একটি পূর্ণবয়স্ক পাঁঠার ওজন ৬০-৯০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৪০-৬০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দৈনিক দুধ উৎপাদন ৩-৪ লিটার। 

বারবারি ছাগল 
বারবারি জাতের ছাগল মাঝারি আকারের তবে দুনিয়াজুড়ে এরা নান্দনিক সৌন্দর্য্য, অধিক উৎপাদনশীলতা, সুস্বাদু মাংস ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। মুখটা চিকন ও হরিণের মত মায়াবী, পা দুটোও হরিণের মত। বারবারি ছাগলের অতি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং এক বছর (১২ মাস) থেকে ১৪ মাসের মধ্যে এই ছাগল দুইবার বাচ্চা প্রসব করে। এ জাতের ছাগী প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা জন্ম দেয়। এই ছাগল মূলত ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে পাওয়া যায়। খামার করার জন্য বারবারি ছাগল অত্যন্ত উপযোগী।  

বৈশিষ্ট্য: আকার মাঝারি ধরনের। এরা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং সদা সতর্ক অবস্থায় থকে। এদের কান খাড়া এবং পাঁঠার মুখে ঘন দাঁড়ি থাকে। পাঁঠা ও পাঁঠির মোড়ানো শিং থাকে যেটা উপরে বা পিছনে খাড়া থাকে এবং দৈর্ঘ্যে মধ্যম আকারের হয়ে থাকে। বারবারি ছাগলের লোমের রঙয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র থাকে তবে সাধারণত সাদার উপর হালকা বাদামী গোলাকার বর্ণের হয়ে থাকে। প্রপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন প্রায় ৪০-৪৫ কেজি ও মেয়ে ছাগলের ওজন প্রায় ২৫-৩০ কেজি হয়ে থাকে। 

বোয়ার ছাগল  
এই জাতটি সারা পৃথিবীতে খুব জনপ্রিয় হয়েছে মাংস উৎপাদনের জন্য। যে কোনো পরিবেশ খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। এদের প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম পৰ্যন্ত ওজন বাড়ে যা কিনা ৩ মাসে ৩০ থেকে ৩৬ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। খুব বাজে খাবার ব্যাবস্থায় ও এরা ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে ৩ মাসে। এরা খুব দ্রুত পূর্ণ বয়স্ক হয়ে থাকে এবং ২ থেকে ৪ টা বাচ্চা এক সাথে দিয়ে থাকে। ২টি বাচ্চা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ।  

সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্ট্য 
সুস্থ ছাগলের নাড়ির স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার এবং তাপমাত্রা ৩৯.৫ সেঃ হওয়া উচিত। সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে, মাথা সবসময় উঁচু থাকে, নাসারন্ধ থাকবে পরিষ্কার, চামড়া নরম, পশম মসৃন ও চকচকে দেখাবে এবং পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিচ্ছন্ন। 

পাঁঠার ক্ষেত্রে 
*পাঁঠার বয়স অল্প হতে হবে, অন্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে। 
* পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে। 
* পাঁঠার মা, দাদী বা নানীর বিস্তারিত তথ্যাদি ( প্রতিবারে একটির বেশি বাচ্চা হতো কি না ইত্যাদি গুণাবলী) সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই ক্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। 

পাঁঠা নির্বাচন 
লাভজনক ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখিত জাতের পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস- গুনাবলী বিবেচনা প্রয়োজন তা নিম্নরূপ। বিভিন্ন বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়। 

উন্নত গুনাগুন সম্বলিত একটি পাঁঠার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা প্রয়োজন:
চোখ : পরিষ্কার, বড় ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন হবে 
ঘাড় : খাটো ও মোটা থাকবে 
বুক : গভীর ও প্রশস্ত হবে 
পিঠ : প্রশস্ত হবে 
লয়েন : প্রশস্ত ও পুরু এবং রাম্প এর উপরিভাগ সমতল ও লম্বা থাকবে 
পা : সোজা, খাটো এবং মোটা হবে। বিশেষ করে পিছনের পা-দ্বয় সুঠাম ও শক্তিশালী হবে এবং একটি হতে অন্যটি বেশ পৃথক থাকবে 
অন্ডকোষ : শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঝুলানো থাকবে 
বয়স : অধিক বয়স্ক (২ বছর বয়সের বেশি) পাঁঠা নির্বাচন করা যাবে না 

বয়স নির্ণয় 
ছাগলের দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করতে হয়। বয়স ১২ মাসের নিচে হলে দুধের সবগুলোর দাঁত থাকবে, ১২-১৫ মাসের নিচে বয়স হলে স্থায়ী দাঁত এবং ৩৭ মাসের ঊর্ধ্বে বয়স হলে ৪ জোড়া স্থায়ী দাঁত থাকবে। 

উন্নত গুনাগুন বিশিষ্ট একটি ছাগীর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যাগুলো থাকা প্রয়োজন:
মাথা - চওড়া ও ছোট হবে 
দৈহিক গঠন - শরীর কৌনিক এবং অপ্রয়োজনীয় পেশীমুক্ত হবে 
বুক ও পেট - বুকের ও পেটের বেড় গভীর হবে 
পাঁজরের হাড় - পাঁজরের হাড় চওড়া এবং দুইটি হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকবে 
ওলান - ওলানের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। বাঁটগুলো হবে আঙ্গুলের মত একই আকারের এবং 
সমান্তরালভাবে সাজানো। দুধের শিরা উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাবে 
বাহ্যিক অবয়ব - আকর্ষণীয় চেহারা, ছাগী সুলভ আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিখুঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ 

শেড তৈরি ও যত্ন 

দুই ধরনের বাসস্থান 
১. ভূমির উপর স্থাপিত ঘর 
এ ধরনের ঘরের মেঝে কাঁচা অথবা পাকা হতে পারে। সাধারণত কৃষকেরা এধরনের ঘরে ছাগল পালন করে থাকে। এ ধরনের ঘরের মেঝেতে শুকনো খড় বিছিয়ে ঘর সব সময় পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে। 

২. মাচার উপর স্থাপিত ঘর 
এ ধরনের ঘর মাটি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় খুঁটির উপর স্থাপিত হয় । ঘরের মেঝে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচার মত তৈরি করা হয় ।এ ধরনের ঘর স্বাস্থ্যসন্মত এবং পরিষ্কার করা সহজ । 

দু’ধরনের ঘরই একচালা, দো- চালা বা চৌচালা হতে পারে এবং ছাগলের সংখ্যার উপর ছোটও বড় হতে পারে। 
ছাগলের খামারের জায়গা নির্বাচন, অবস্থান ও বাসস্থান:- 
• জায়গা উঁচু হতে হবে, যেন বৃষ্টির পানি না জমে । 
• প্রধান সড়ক হতে দূরে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হতে হবে । 
• খোলামেলা পরিবেশ হতেহবে । 
• কাঁকড় ও বালি মিশ্রিত স্থান যেখানে পানি সহজে শুকিয়ে যায় । 
• পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতেহবে । 
• ঘনবসতি এলাকা এবংশহর হতে দূরেহতে হবে । 
• পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবস্থা ভাল হতে হবে । 
• শ্রমিক মজুরী কমও জায়গার সহজলভ্য এলাকা নির্বাচন করা উত্তম। 
• পর্যাপ্ত ফলের গাছও চারণ ভূমি আশেপাশে থাকতে হতে। 

ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণুমুক্ত করণ পদ্ধতি 
• ছাগল সকালে বের করার পর ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করেত হবে । 
• ছাগলের ঘর স্যাঁতস্যাঁতে মুক্ত রাখতে হবে । আলো, বাতাস ও বায়ু চলাচল সুব্যবস্থা রাখতে হবে । 
• বৃষ্টির পানি ও ঠাণ্ডা দুটোই ছাগলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে 
• সপ্তাহে একদিন ছাগলের ঘর জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ভালমতো পরিষ্কার করতে হবে । 

ছাগলের রোগ বালাই ও টিকা 
কর্মসূচি অনুযায়ী টিকা প্রদান 
ভাইরাসজনিত রোগ যেমন পিপিআর, গোটপক্স, ক্ষুরারোগ ইত্যাদি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যেমন এনথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি খুবই মারাত্মক বলে এগুলোর বিরুদ্ধে যথারীতি টিকা প্রদান করতে হবে। যেসব ছাগীকে পূর্বে পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি টিকা দেয়া হয়নি তাদেরকে গর্ভের ৫ম মাসে উক্ত ভ্যাকসিনগুলি দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন ৫ মাস তখন তাকে পিপিআর ভ্যাকসিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে। 
goat vaccination chart


সাধারণ রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা 
ছাগলের ও ভেড়ার ব্লোট বা পেট ফাঁপা  
সাধারণত আন্তঃবিষক্রিয়ায় এই সমস্যার দেখা দেয়। কিছু অসুখ যেমন পাল্পি কিডনি ডিজিজ এছাড়া ই-কোলাই ইনফেকশন, সালমোনেলা ইনফেকশন সহ অন্যান্য বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণুর আক্রমণেও হয়ে থাকে। তাই ক্লোস্ট্রিডিয়াল দ্বারা সৃষ্টি হবে এমন রোগের জন্য এন্টিক্লোস্ট্রি ডিয়াল ভ্যাকসিন পশু চড়তে দেয়ার আগে করে নেয়া ভাল। 

লক্ষণ  
হঠাৎ খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। 
জাবর কাটা বন্ধ করা 
পেট ফুলে যায়, বাড়ি দিলে ডেপ ডেপ শ্বব্দ করে। 
শ্বাসপ্রশ্বাস এ কষ্ট হয়। 
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ঝিমাই। 
চোখ বন্ধ করে রাখে। 

রোগ নির্ণয়  : ইতিহাস ও লক্ষণ সমুহ দেখে এবং পেটে বাড়ি দিলে ডেপ ডেপ শব্দ শুনে রোগ নির্ণয় করা হয়। 

চিকিৎসা 
যে কোন একটি এন্টিব্লোট প্রিপারেসন কোম্পানির বিধি অনুসারে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাওয়াতে হবে। বর্তমানে ট্যাম্পাইল  ভেড়ার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া খাবার সয়াবিন তেল ৫০-৬০ মিলি লিটার বা প্যারাফিন তেল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে। এন্টিব্লোট ওষুধের প্রয়োগের পর হাত দিয়ে পেটের উপর মালিশ করতে হবে যাতে করে ভালো ভাবে মিশ্রিত হয়। সাবধানতার সাথে হাত দিয়ে মালিশ করে তেল বা ঔষধের রুমেনের খাবারের সাথে মিশ্রণ ঘটাতে হবে। 

প্রতিরোধ  
চারণভূমিতে পশু চরার সময় বেঁধে দিয়ে পশুর ঘাস গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 
খাবার পানির সাথে এন্টিব্লোট প্রিপারেসন মিশিয়ে। 
এলকোহল ইথোক্সিলেট ও চিটা গুড়ের মিশ্রণ সেবন করাতে হবে।
অতিরিক্ত দানাদার খাবার (ধান, চাল) খাওয়া থেকে বিরত লাখতে হবে। 
মাঝে মাঝে এন্টিব্লোট ক্যাপসুল এর ব্যবহার করতে হবে।
পশু পালনের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে খাদ্য নয় এমন কিছু না খায়। 

পেটফাঁপা বা ব্লোট চিকিৎসা
ঔষধের নাম পরিমাণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

Bloat-Drench oral bloat control: ২১ মিলিলিটার করে প্রতিটি পশুকে দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে। এলকোহল ইথাক্সলেট, চিটাগুড় ও পানির সাথে যোগকরে খাওয়ালে ভালো।

Tympanyl TM: প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর জন্য ৩৫০ মিলিলিটার, ছাগল বা ভেড়াকে  ১৭০ মিলিলিটার করে খাওয়তে হবে। এতে আছে ইমালসিফায়ার সারফেকটেন্ট এবং তেল বীজের নির্যাস।

Bloat-rid: প্রতি প্রাণীর জন্য ৬০-১১৩ মিলি পরিমাণ মুখে সেবন করা হবে। পাকস্থলী ধৌত এবং পাসচারে স্প্রে করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে আছে প্রাণিজ, উদ্ভিদজাত ও ভোজ্য তেল

Nutrimol ® Bloat Master TM: ২৫ মিলি পরিমাণ ১০০-৩০০ মিলি হাল্কা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়তে হবে। প্রতিরোধের জন্য ৫-১২ মিলি দিনে দুই বার ১ঃ৪ অনুপাতে পানি দিয়ে গুলে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।

No-Bloat: প্রতি প্রাণীর জন্য ৬৫ গ্রাম সরাসরি পেটে এবং ৮৫ গ্রাম করে পাসচারে দেওয়া যায়। সলিউশন বা সাসপেনসন দুই ভাবে পাওয়া যায়। এতে উদ্ভিদজাত ও প্রাণিজ তেল আছে

Bloatenz Oral: প্রতিরোধ এর জন্য ৭১৫ মিলি প্রতি প্রাণীর জন্য। এলকোহল ইথোক্সিলেট থাকে। পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।

Coopers® Teric bloat liquid: প্রতিটি প্রাণীর জন্য প্রতিদিন ২০-৪০ মিলি করে চিটাগুড় বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এতে আছে এলকোহল ইথোক্সিলেট টেরিক। তবে সচরাচর পাওয়া যায় না।

অথবা 

এক কাপ তিসির তেল খাইয়ে দিলে স্বস্তি পায়। তাছাড়া ব্লোটোসিল ২০ মিলি ১২ ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে রোগ সেরে যেতে পারে। তবে অত্যধিক পেট ফুলে গেলে সুঁচ ফুটিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হয়। 

কচি সবুজ ঘাস বেশি করে খাওয়ানো ঠিক নয়, সুবাবুলের (ইপিল ইপিল) পাতাও বেশি খাওয়াতে নেই। 

খাবার 
ক. কাঁচা (ঘাস, গাছের পাতা, খেসারির গাছ, কলাগাছ, আলু) 
খ. শুকনো (ধান ও খেসারির খড়) 
গ. দানাদার 

খাদ্য ব্যবস্থাপনা 
প্রতি ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ০.৫-১ কেজি পরিমাণ কাঠাঁল, ইপিল ইপিল, ঝিকা, বাবলা পাতা অথবা এদের মিশ্রণ দেয়া যেতে পারে। প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০-৩০০ গ্রাম ঘরে প্রস্তুতকৃত দানাদার খাদ্য দেয়া যেতে পারে। ১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন তা হচ্ছেঃ চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুড়া ৫ কেজি, খেসারি বা অন্য কোনো ডালের ভূষি ৫০০ গ্রাম, ঝিনুকের গুড়া ২০০ গ্রাম এবং লবণ ৩০০ গ্রাম। ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় ও সাইলেজ খাওয়ালে ভাল হয়। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে এবং পরিপাকও ভালোভাবে হয়। জন্মের পর থেকেই ছাগল ছানাকে আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস ইত্যাদিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার পানি খেতে দিতে হবে। বাড়ন্ত ছাগলকে দৈনিক প্রায় ১ লিটারের মতো পানি পান করা উচিত। 

কাঁচাঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া-চিটাগুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে। 

উপকরণ 
২-৩ ইঞ্চি মাপের কাটা খড় ১ কেজি, চিটাগুড় ২২০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ও পানি ৬০০ গ্রাম। এবারে পানিতে ইউরিয়া গুলে তাতে চিটাগুড় দিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে সরাসরি ছাগলকে দিতে হবে। খাসীর ক্ষেত্রে তিন-চার মাস বয়সে দুধ ছাড়ানোর পর নিয়মিত সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ালে দৈনিক ৬০ গ্রাম করে দৈহিক ওজন বাড়ে ও এক বছরের মধ্যে ১৮-২২ কেজি ওজন প্রাপ্ত হয়ে থাকে। খাসীকে দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে মোট ওজনের ৭% পর্যন্ত পাতা বা ঘাস জাতীয় খাদ্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ (চাল ভাঙ্গা ৪০%, কুড়া ৫০%, ডালের ভূষি ৫৫, লবণ ৩% এবং ঝিনুকের গুড়া ২%) ১০০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ গ্রাম ও ভাতের মাড় ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে দেয়া যেতে পারে। 

খাসীর ওজন ২০ কেজির বেশি হয়ে গেলে এদের দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এ সময়েই এদেরকে বাজারজাত করা উচিত। ছাগল খামারের খাদ্য খরচ মোট খরচের ৬০-৭০% হওয়া আবশ্যক। বাণিজ্যিক খামারের লাভ-লোকসান তাই খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।  

ছাগলের দানাদার খাদ্যের তালিকা :

বাচ্চার সুষম খাদ্য
(এই সুষম খাবার মায়ের দুধের পাশাপাশি দিতে হবে)
উপাদান পরিমাণ (%) 
ছোলা         ২০ 
ভুট্টা                 ২২ 
তিল বা চিনাবাদামের খৈল ৩৫ 
গমের ভুষি ২০ 
খনিজ মিশ্রণ          ২.৫ 
লবণ                  ০.৫ 
মোট                  ১০০ 

দৈহিক ওজন ভেদে দানাদার খাবার 
৫ কেজি ওজনের জন্য = ২০০ গ্রাম 
৬ কেজির ওজনের জন্য = ৩০০ গ্রাম 
৭ কেজির ওজনের জন্য = ৫০০ গ্রাম 

বড় ছাগলের দানাদার খাদ্য 
উপাদান পরিমাণ (%) 
ছোলা       ১৫ 
ভুট্টা               ৩৭ 
তিল বা চিনাবাদামের খৈল        ২৫ 
গমের ভুষি        ২০ 
খনিজ মিশ্রণ         ২.৫ 
লবণ                 ০.৫ 
মোট                 ১০০ 

বাচ্চা ছাগলের খাদ্য 
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সাধারণত একাধিক বাচ্চা প্রসব করে থাকে। তাই সবগুলো বাচ্চা যেন সমানভাবে প্রয়োজন মত দুধ খেতে পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । ঠিক মত খেয়াল না করলে সবল বাচ্চাগুলো দুধ ইচ্ছামত খেয়ে ফেলে এজন্য দেখা যায় দুর্বল বাচ্চাগুলো দুধ খেতে না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগে অকালে মারা যায় । এজন্য বাচ্চাদেরকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে খুব সজাগ থাকতে হবে। 

দুধ ছাড়ানোর আগে ও পরে বাচ্চার খাদ্য 

দানাদার খাদ্য মিশ্রণের নমুনা 
উপাদান পরিমাণ (%) 
চালভাঙ্গা ২৫ 
খেসারি ভাংগা ২৫ 
গমের ভুষি ২৫ 
সয়াবিন খৈল ১৬ 
প্রোটিন কনসেন্ট্রেট ২ 
সয়াবিন তেল ১ 
চিটাগুড় ৪ 
লবণ         ১
ভিটামিন- মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫ 
ডি.সি. পি          ০.৫ 
মোট         ১০০ 

বাড়ন্ত বয়সের ছাগলের খাদ্য 
মায়ের দুধ ছাড়ার পর বাচ্চার খাদ্যর অবস্থা খুব জটিল পর্যায়ে থাকে । যেহেতু এ সময় মায়ের দুধ পায়না আবার সময়টিও বাড়ন্ত; তাই খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয় । ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বেলায় ৪-১৪ মাস বয়সকে বাড়ন্ত সময় বলা হয় । যে সব ছাগলকে মাংস বা বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে তাদের পুষ্টি বা খাদ্যের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে । জন্মের ২য় সপ্তাহ থেকে ছাগলকে ধীরেধীরে অল্প অল্প করে দানাদার খাদ্য অভ্যাস করতে হবে। 

গর্ভবতী ছাগীর গর্ভের শেষ দুই মাস পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে হয় । তা না দিলে বাচ্চা দুর্বল হয় এমনকি মৃত বাচ্চা প্রসব করার আশংকা থাকে। ছাগলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় । মায়ের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায় এবং পুনরায় গর্ভধারণ করতে দেরি হয় । তাই ছাগল গর্ভবতী অবস্থায় খাদ্যের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে । 
নিম্নে বাণিজ্যিকভাবে পালিত ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ দেওয়া হলো : 

ছাগলের বাচ্চার বয়স অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ 
ration for baby goat

বাণিজ্যিকভাবে পালিত ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ  
ration for commercial goat farm

পূর্ণাঙ্গ খাদ্য সারণি:
complete ration chart for goat farm


ছাগলকে খড় খাওয়ানো 
ঘাস না পাওয়া গেলে খড়কে ১.৫-২.০ ইঞ্চি (আঙুলের দুই কর) পরিমানে কেটে নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ানো যেতে পারে। এজন্য ১ কেজি খড়ের সাথে ২০০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ইউএমএস  তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে অ্যালজি (শৈবাল/শেওলা) উৎপাদন করে দৈনিক ১-১.৫ লিটার পরিমানে খাওয়াতে হবে। একটি ছাগল দৈনিক ১.০-২.০ লিটার পানি খায়। এজন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। 

বাচ্চা, বুড়ানি, বিক্রিযোগ্য বা খাসি ও পাঁঠার যত্ন 
• প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে ছাগল বের করে ঘরের আশেপাশে চরতে দিতে হবে । 
• এদেরকে ব্যায়াম ও গায়ে সূর্য কিরণ লাগানোর পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে । 
• ঘর থেকে ছাগল বের করার পর ঘর ভালো করে ধুতে হবে । 
• ঘর থেকে ছাগল বের করার আগে কোন ছাগল অসুস্থ আছে কি না লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে তা সাথে সাথে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। 
• খামারে বেশি ছাগল হলে তাদের চিহ্নিত করার জন্য ট্যাগ নম্বর লাগাতে হবে । 
• ছাগলকে নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে । 
• ছাগল পানি পছন্দ করে না তাই নিয়মিত গোসলের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার রাখতে হবে । এতে লোমের ময়লা বের হয়ে আসে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ব্রাশ করালে লোম উজ্জ্বল দেখায় এবং চামড়ার মান বৃদ্ধি পায় । 
• সকল বয়সের ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে । 

দৈনিক কার্যক্রম সূচি 

ক) সকাল ৭-৯ টা 
• ছাগলের সার্বিক অবস্থা ও আচরণ পরীক্ষা করতে হবে । 
• পানির পাত্র/ খাবার পাত্র পরিষ্কার করা এবং পাত্রে খাবারও পানি সরবরাহ করতে হবে । 
• খাবার দেবার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আচরণ পরীক্ষা করতে হবে। 
• ছাগল সকালে বের করার পর ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে । 

 খ) সকাল ১১-১২ টা 
• খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে। 

গ) বিকাল ৪-৫ টা 
• খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। 
• দরজা বন্ধ করতে হবে । 
• আচরণ পরীক্ষা করতে হবে । 

সাপ্তাহিক কাজ 
• খাদ্য তৈরি করতে হবে  
• ঘর জীবাণুনাশক পানি দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে । 
• প্রয়োজনে টিকা প্রদান বা কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে । 

অন্যান্য 
• গরমকালে মিশ্রিত সুষম খাদ্য ৭ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না । 
• খামারে নতুন ছাগল সংগ্রহের সময় অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল ক্রয় করতে হবে । 
• খামারে নিয়মিত টিকাপ্র দানের ব্যবস্থা করতে হবে । 
• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। 
• ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন খাদ্যও পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে। 
• সপ্তাহে একদিন ছাগলের ঘর, খাবার ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 
• সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫ % ম্যালাথিনয়ন দ্রবণে ডুবিয়ে চর্মরোগ মুক্ত রাখতে হবে । 
• প্রজননশীল পাঁঠা ও ছাগীকে বছরে দুবার ১-১.৫ মি. লি. ভিটামিন এ.ডি. ই ইনজেকশন দিতে হবে । 
• ছাগল মারা গেলে খামার থেকে দূরে কোথাও মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 
এক নজরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা 
ছাগলের খামারে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য নিয়মিত পিপিআর টিকা, কৃমিনাশক ইত্যাদির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। ছাগলের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ পি.পি.আর এবং গোটপক্সের ভেক্সিন জন্মের ৩ মাস পরে দিতে হয়। বছরে দুবার বর্ষার আগে (এপ্রিল-মে) কৃমিনাশক এবং বর্ষার শেষে (অক্টোবর-নভেম্বর) কৃমিনাশক যেমন: নেমাফেক্স, রেলনেক্স অথবা ফেনাজল ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া যকৃত কৃমির জন্য ফেসিনেক্স, ডোভাইন, ইত্যাদি ব্যবহার করা প্রয়োজন। কোন ছাগলের চর্মরোগ দেখা দিলে তা ফার্ম থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যে কোন নূতন ছাগল খামারে প্রবেশ করানোর আগে কমপক্ষে এক সপ্তাহ অন্যস্থানে রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। খামারের সকল ছাগলকে ১৫-৩০ দিন পর পর ০.৫% মেলাথায়ন দ্রবণে ডিপিং করানো (চুবানো) উচিত। 

ছাগলের বাচ্চার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা  
১. জন্মের পরপরই ছাগলের বাচ্চাকে শালদুধ খাওয়াতে হবে।  
২. জন্মের কিছু পর ছাগলের বাচ্চাকে পরিষ্কার করে এর নাভি ৩-৪ সেমি নিচে কেটে দিতে হবে এবং কাটা অংশে টিঙ্কচার অব আয়োডিন লাগাতে হবে। 
৩. মায়ের দুধের পরিমাণ কম এমন বাচ্চাকে বোতলে অন্য ছাগলের দুধ বা বিকল্প দুধ (মিল্ক রিপে−সার) খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে হালকা গরম (৩৮-৩৯০সে. তাপমাত্রার) দুধ খাওয়ানো উচিত। 
৪. শীতের সময়ে বাচ্চাকে মায়ের সাথে রাখতে হবে। এ সময় ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৮০সে. থাকলে ভালো হয়।  
৫. বাচ্চা যেন অতিরিক্ত দুধ না খেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত দুধ খাওয়ার ফলে বাচ্চার ডায়রিয়া হতে পারে যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 
৬. পাঁঠার জন্য সবচেয়ে ভালো ছাগলের পুরুষ বাচ্চা নির্বাচন করতে হবে এবং যতœ নিতে হবে। যেসব পুরুষ বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত হবে না তাদেরকে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে খাসী করাতে হবে। 
৭. প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কাঁচা ঘাস বাচ্চাকে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এর ফলে প্রয়োজনীয় ভিটামিনসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদানের অভাব হবে না। 

নবজাত বাচ্চা ছাগলের যত্ন 
• বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস চালুকরা এবং বাচ্চার শরীর পরিষ্কার করা ও শুকানো । 
• বাচ্চার নাভি রজ্জুপরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে । 
• নাভি কাটার পর উক্ত স্থানে টিঙ্কচার আয়োডিন বা টিঙ্কচার বেনজীন জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে । 
• বাচ্চাকে শাল দুধ বা কলস্ট্রাম পান করাতে হবে । 

যত্ন ও বাচ্চা পালন পদ্ধতি 
বাচ্চা পালন পদ্ধতিঃ- দুটো পদ্ধতিতে ছাগলের বাচ্চাপালন করা হয়। যথা- 
(১) প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মায়ের সঙ্গে ও 
(২) কৃত্রিম পদ্ধতিতে মা বিহীন অবস্থায় পালন  

প্রতিটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে তবে এদের প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি প্রচলিত ।সাধারণত দু’ সপ্তাহ বয়স থেকেই বাচ্চারা কাঁচা ঘাস বা লতাপাতা খেতে শুরু করে ।তাই এদের নাগালের মধ্যে কচি ঘাস , লতাপাতা এবং দানাদার খাদ্য রাখতে হয় ।সময় বাচ্চাদের জন্য প্রচুর উন্মুক্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । গ্রীষ্মকালে দিনের বেলা গাছের নিচে বেড়া দিয়ে বাচ্চাপালন করা যায়। এতে এরা একদিকে পর্যাপ্ত ছায়া পেতে পারে ।অন্যদিকে দৌড়াদৌড়ি এবং ব্যায়াম করার প্রচুর সুযোগ পায়, যা তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজন । 

প্রতিটি বাচ্চা ছাগলকে জন্মের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৩০০-৩২৫ মি.লি. দুধ ৩-৪ বারে পান করাতে হবে ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৬-৭ সপ্তাহে তা ৭৫০-৮৫০ মি.লি. এ উন্নীত করতে হবে ।দুধের বিকল্প খাদ্য ৩ সপ্তাহ বয়সের পর খেতে দেয়া যেতে পারে । ১০-১১ সপ্তাহে দৈনিক দুধ সরবরাহের পরিমাণ ২০০-১০০ মি.লি. নামিয়ে আনতে হবে । এ সময় দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য ও প্রচুর কচি ঘাস, লতাপাতা সরবরাহ করতেহবে । ৩-৪ মাস বয়সে দুধ পান করানো পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ এসময় শক্ত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার জন্য বাচ্চার পাকস্থলী পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে যায় ।শরৎ ও হেমন্ত কালে ছাগলের মৃত্যুর হার অত্যধিক বেশি থাকে এ সময় কৃমির আক্রমণ দেখা দিতে পারে ।তাছাড়া নিউমোনিয়া এবং এন্টারোটক্সিমিয়া ব্যাপক হারে দেখা দিতে পারে । তাই এ সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ । 

ছাগলের বাচ্চার প্রধান প্রধান রোগ 
ছাগলের বাচ্চা প্রধানত কন্টাজিয়াস একথাইমা, টিটেনাস, ডায়রিয়া বা কলিব্যাসিলোসিস, নিউমোনিয়া, পিপিআর, গোটপক্স, ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। নিম্নে উক্ত রোগসমূহের মধ্য থেকে প্রধান কিছু রোগ 

 (১) কন্টাজিয়াস একথাইমা  
কন্টাজিয়াস একথাইমা ছাগলের বাচ্চার একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। অত্যন্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতির এই রোগটি বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগটি ১০ দিন থেকে ৩ মাস বয়সের ছাগলে বেশি দেখা যায়। তবে যে কোনো বয়সের ছগলে এ রোগ দেখা দিতে পারে। সকল জাতের ছাগলে রোগটি দেখা যায়। সরাসরি স্পর্শ, বাতাস, খাবার এবং বিছানাপত্রের মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। 

রোগের লক্ষণ  
এ রোগের সুপ্তাবস্থা ৩-৭ দিন। প্রথম দিকে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ঠোঁটের চারদিকে লাল রংয়ের ছোট ছোট গুটি দেখা দেয়। পরে গুটিগুলোতে পুঁজ হয়ে ঠোঁটের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঠোঁট মোটা হয়ে যায়। ক্ষত অনেক সময় মুখের ভেতর ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মুখে ক্ষত হবার কারণে ছাগলের বাচ্চা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়; ফলে বাচ্চার মৃত্যু ঘটে।মুখে ব্যথাযুক্ত ক্ষত থাকার কারণে না খেয়ে ছাগলের বাচ্চা মারা যায়। ১০০% ছাগলের বাচ্চা আক্রান্ত হতে পারে এবং ২০-৭৫% ছাগল মারা যেতে পারে। মুখের ক্ষত ছাড়াও এ রোগে দুই খুরের মাঝখানে, কানে, মলদ্বারে ও যোনিদ্বারের চারপার্শ্বে ক্ষত দেখা দিতে পারে। 

চিকিৎসা  
২% কৃস্টাল ভায়োলেট এবং প্রভিডোন আয়োডিন ব্যবহার করতে হবে।  
এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।  
বাচ্চাকে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।  

প্রতিরোধ  
অসুস্থ ছাগলকে আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হবে 
টিকা প্রদান করতে হবে 
মায়ের টিকা প্রদান করা থাকলে বাচ্চাকে টিকা প্রদান করার প্রয়োজন নেই 
রোগ থেকে সেরে ওঠা ছাগলে আবার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। 

(২) ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস  
ধনুষ্টংকার ছাগলের খুবই মারাত্মক রোগ যা ক্লোসট্রিডিয়াম টিটেনি নামক জীবাণুর বিষ দ্বারা হয়ে থাকে। ক্লোসট্রিডিয়াম জীবাণুর স্পোর মাটি হতে ক্ষতের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। এ রোগে ছাগলে বাচ্চার ব্যাপক মৃত্যু হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাচ্চা যখন খাসি করা হয় তার পরে। 

লক্ষণ  
এ রোগের সুপ্তাবস্থা ১০-১৪ দিন। আক্রান্ত প্রাণীর চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়, মাথা, ঘাড়, পা এবং লেজ শক্ত হয়ে যায়। চোয়াল বন্ধ হয়ে যায়। মুখ হতে খাবার পড়ে যায় ও লালা ঝরতে থাকে। খিঁচুনী শুরু হয় এবং মারা যাওয়ার পূর্বে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৮-১১০০ফা)। মৃত্যুর হার ৮০%। 

চিকিৎসা  
১৫০০-৩০০০ ইউনিট এন্টিটক্সিন শিরায় প্রয়োগ করার ৬ ঘন্টা পর মাংসে অথবা চামড়ার নিচে পুনরায় ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে। 
ক্ষত পরিষ্কার করে বাতাসের সংস্পর্শে এনে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং পেনিসিলিন প্রয়োগ করতে হবে। 

প্রতিরোধ  
যে কোনো অপারেশনের সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। অপারেশনের আগে ১ মিলি টিটেনাস টক্সয়েড মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চা প্রসবের আগে ছাগীতে এবং প্রসবের পর বাচ্চাতে ১ মিলি করে টিটেনাস টক্সয়েড মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।  

(৩) কলিব্যাসিলোসিস  
ই. কলাই নামক জীবাণুঘটিত কলিব্যাসিলোসিস রোগটি ছাগলের বাচ্চার খুবই সাধারণ একটি রোগ।প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া না হলে এ রোগে প্রচুর সংখ্যক বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে। সাধারণত ২ থেকে ১০ দিনের বাচ্চা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

লক্ষণ 
বাচ্চা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ঝিমুনী, লালা পড়া, পেট ফুলে যাওয়া, সাদা বা হলুদ রং-এর পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট, মুখে পানি জমে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। মারা যাওয়ার পূর্বে দেহের তাপমাত্রা কমে যায় এবং পাতলা পায়খানা বেড়ে যায়। চিকিৎসা প্রদান না করলে ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু ঘটে। 

চিকিৎসা  
এন্টিবায়োটিক যেমন ক্লোরামফেনিকল, জেন্টামাইসিন, স্ট্রেপটিামাইসিন বা ট্রাইমিথোপ্রিন, সালফোনামাইডস্, ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। শিরায় স্যালাইন প্রয়োগ বা মুখে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।  
প্রতিরোধ  
জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার জন্য যথাযথ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। 

(৪) নিউমোনিয়া  
নিউমোনিয়া বাচ্চা ছাগলের একটি অন্যতম মারাত্মক রোগ, বিশেষ করে অতি শীত ও অতি বৃষ্টির সময় বাচ্চার প্রয়োজনীয় যত্নের অভাবে এ রোগ হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা দিতে না পারলে এ রোগে বাচ্চার ব্যাপক মৃত্যু হতে পারে। খাবার, পানি, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং সংস্পর্শের মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। যেসব কারণে রোগটির সংক্রমণ বাড়ে তা হলো ঘরে বাতাস প্রবাহ কম হলে, খারাপ আবহাওয়া, এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় ছাগল স্থানান্তর, কৃমির মারাত্মক সংক্রমণ, অপুষ্টি, ইত্যাদি। 

লক্ষণ 
অল্প দিনের বাচ্চা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নাক দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসরণ, মুখ থেকে ফেনা বের হওয়া, ইত্যাদি দেখা দেয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪-১০৬০ ফা হয়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ও ঝিমায়। আক্রান্তের হার ১০০% এবং মৃত্যুর হার ২০-১০০%।  

চিকিৎসা  
এন্টিবায়োটিক যেমন : অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন টারট্রেট বা সালফামেথাজিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। এন্টিহিস্টামিনিক ওষুধ প্রদান করতে হবে।  

প্রতিরোধ  
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পরিষ্কার ঘর ও খামারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভালো হতে হবে। অসুস্থ বাচ্চাকে আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হবে। খারাপ আবহাওয়া থেকে সাবধানে রাখতে হবে । যতœ সহকারে ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া ছাগলের বাচ্চা পিপিআর, গোটপক্স ইত্যাদি রোগেও আক্রান্ত হতে পারে।  

খেয়াল রাখতে হবে 
সঠিক অনুপাতে (১০ টি ছাগীর জন্য ১টি পাঁঠা) ছাগী ও পাঁঠা পালন করতে হবে। পাঁঠা এবং ছাগীকে কখনও একত্রে খাদ্য খেতে ও মাঠে চরানো যাবে না, কারণ পাঠাঁ ছাগীকে খাদ্য খেতে অসুবিধার সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় মারামারি করে ক্ষতের সৃষ্টি করে থাকে। প্রজননক্ষম পাঠাঁ ছাগীকে নিয়মিত (বছরে ৫-৬ বার) ০.৫% মেলাথিয়ন দ্রবণে চুবিয়ে বহিঃপরজীবী থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাচ্চার ক্ষেত্রে যাতে উক্ত দ্রবণ নাকে বা কানে যেন প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

(গর্ভের ১ম মাসে ১-১.৫ মিলি ভিটামিন এ.ডি.ই এবং গর্ভের শেষ দুই সপ্তাহে ১-১.৫ মিলি ৪৮ ঘন্টা পরপর ইনজেকশন দিতে হবে)। প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলে ছাগীর পিছনের অংশ ও ওলান পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর ০.৫-১% দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে মুছে দিতে হবে। বাচ্চা প্রসবের পর জীবাণুমুক্ত সার্জিক্যাল চাকু বা ব্লেড দ্বারা নাভি ২-৩ সেঃমিঃ রেখে বাকি অংশ কেটে দিতে হবে। 

(এ সময় ছাগীর জরায়ুতে যাতে ইনফেকশন না হয় সেজন্য পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গনেট দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং এরপর ক্যাপলেট (মাত্রাঃ১ ক্যাপলেট/১০-২০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) অথবা বোলাস (মাত্রাঃ ১-২ বোলাস) জরায়ুতে দিতে হবে)। 

প্রসবের ২৪ ঘন্টা পরও ফুল বা প্লাসেন্টা না পড়লে অক্সিটোসিন (মাত্রাঃ ১-২ মিলি/ ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) ইনজেকশন দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন ৩-৫ সপ্তাহ তখন শিং ওঠা বন্ধ করা উচিত। বাচ্চা বয়স ২-৪ সপ্তাহ হলে তাকে খাসী করানো উচিত। 

খাসী করতে হলে টেবিল বা এ জাতীয় উচু জায়গায় রেখে পিছনের পা দুটো টেনে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এরপর অন্ডকোষকে ৩% টিংচার দ্রবণ দিয়ে ভাল করে মুছে দিতে হবে। অন্ডকাষকে চামড়ার বিপরীতে চেপে ধরে চামড়ার নিচের দিকে একটি মাত্র পোচে কেটে অন্ডকোষ দুইটি বের করে রগ (Spermatic cord) কেটে দিতে হবে। এরপর অন্ডকোষ থলিকে টিংচার অব আয়োডিন দ্বারা পরিষ্কার করে ক্ষতস্থানে পাউডার লাগিয়ে দিতে হবে। 

রেকর্ডবুক 
ছাগলের সঠিক যত্নের জন্য রেকর্ডবুক রাখা অত্যন্ত জরুরি। সেখানে প্রত্যেকটি ছাগলের জন্মতারিখ, বয়স, পাল দেখানোর সময়, খাসি করার সময়/তারিখ, বয়স, লিঙ্গ, বৈশিষ্ট্য, জাত ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য থাকবে। 

ঘাস চাষ 

নেপিয়ার ঘাস 
নেপিয়ার ঘাস বহু বর্ষজীবীর উদ্ভিদ। এটি গ্রামীনণ পরিবারের অন্তর্গত। এ ঘাস একবার চাষ করার পর কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায়। এর পাতা ও কাণ্ড দেখতে কিছুটা আখ গাছের মতো। কাণ্ড গোলাকৃতি ও সবুজ বর্ণের।  

জলবায়ু ও ভূমি : এ ঘাস সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটিতে এর ফলন সবচেয়ে বেশি। এ ঘাসের জন্য উঁচু জমি ভালো। বন্যা প্লাবিত জমি এ ঘাস চাষের জন্য অনুপযুক্ত। বাংলাদেশের আবহাওয়া নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। 

চাষ পদ্ধতি : এ ঘাস চাষের জন্য জমিতে ৪-৫টি চাষ দিতে হয় এবং মই দিয়ে আগাছামুক্ত করার পর রোপণ করতে হয়। দুই চোখ বিশিষ্ট কাণ্ডাংশ অথবা মূলসহ কাণ্ড চারার জন্য ব্যবহৃত হয়। 

ঘাস লাগানো : সারা বর্ষা মৌসুমেই এ ঘাস লাগানো যায়। তবে বর্ষার শুরুতেই রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে রোপণ করা হলে প্রথম বছরেই ৩-৪ বার ঘাস কাটা যেতে পারে। ২ চোখসহ কাণ্ডাংশ অথবা মূলসহ কাণ্ড সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়। এক সারি থেকে অন্য সারিরর দূরত্ব ২-৩ ফুট হবে এবং এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব দেড় ফুট হবে। মাটিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত প্রতি একর জমি রোপণের জন্য ৭-৮ হাজার চারা বা কাটিংয়ের প্রয়োজন হয়। 

সার প্রয়োগ ও পানি সেচ : ভালো ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য সার ও পানির প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্য সময়ে সাধারণত পানির সেচের প্রয়োজন হয়। 

জমি প্রস্তুতের সময় : ১.৫০-২.০০ টন গোবর প্রতি একরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ ইত্যাদি সার ব্যবহার করা হয়। 

বছরে যথাক্রমে ১১২, ৮৯ ও ৪০ কেজি নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ প্রতি একরে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ইউরিয়া বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। ঘাস দু’বার কাটার পর একরপ্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে দিলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। সার ছিটানোর আগে দুই সারির মাঝের জায়গায় লাঙল অথবা কোদার দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। 

ঘাসের ব্যবহার ও ফলন : নেপিয়ার ঘাস কেটে খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো। এতে অপচয় কম হয় এবং পরবর্তী পর্যায়ে ফলন বেড়ে যায়। ঘাস লাগানো ৩ মাস পরে কাটার উপযোগী হয়। ৩ সপ্তাহ পর পর ঘাস কাটা যায়। প্রথম বছর ফলন কিছুটা কম হয় কিন্তু পরবর্তী ২-৩ বছর পর্যন্ত ফলন বেড়ে যায়। বছরে সাধারণত ৮-১০ বার ঘাস কাটা যায় এবং গড়ে প্রতি একরে বছরে ৩০-৪০ মেট্রিক টন কাঁচার ঘাস পাওয়া সম্ভব। কাণ্ড ঘাসের গোড়ার সঙ্গে রেখে কাটা পরবর্তী ফলনের জন্য ভালো। 

জমি থেকে কেটে এ ঘাস সরাসরি গবাদিপশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া ২-৩ ইঞ্চি করে কেটে খড়ের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। নেপিয়ার ঘাসে শতকরা ৭ ভাগ প্রোটিন আছে। নেপিয়ার ঘাস শুকিয়ে সংরৰণ করে সুবিধাজনক নয়। তবে কাঁচা ঘাস সাইলেজ করে শুষ্ক মৌসুমে সংরক্ষণ করা যায়। 

আরও পড়ুন:

Post a Comment

0 Comments