ফাউমি (Fayoumi) বা মিশরীয় ফাউমি। এটি একটি মিশরীয় মুরগির জাত। এই জাতের মুরগির নামকরণ করা হয়েছে এর উৎপত্তিস্থলের নামে। মিশরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং নীল নদের পশ্চিমে অবস্থিত ফায়ুমের গভর্নরেট থেকেই এই মুরগির নামকরণ। ফাউমিকে মুরগির একটি প্রাচীন জাত বলে মনে করা হয়।
১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির কৃষি বিভাগের একজন ডিন মিশর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফাউমি মুরগির কিছু ডিম এনেছিলেন। সেই ডিম থেকে বের হওয়া বাচ্চাগুলো বড় হওয়ার পর সেগুলোর সঙ্গে আমেরিকান মুরগির ক্রস-ব্রিড করেন তিনি।
ওই সময় গবেষকদের ধারণা ছিল যে, আমেরিকান স্টকের (বিভিন্ন স্থানীয় জাত) চেয়ে মিশরীয় ফাউমির ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে।
তবে ফাউমিকে কিন্তু এখনো আমেরিকান পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন স্বীকৃত দেয়নি। অ্যাসোসিয়েশনের স্ট্যান্ডার্ড অব পারফেকশনে অন্তর্ভুক্ত নয় এই জাত।
ফাউমি প্রথম ১৯৮৪ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যে আমদানি করা হয়। এ দেশে ফাউমি মুুরগির দুটি রঙের জাত স্বীকৃত: সিলভার-পেন্সিল এবং গোল্ড-পেন্সিল।
বৈশিষ্ট্য
ফাউমি জাতের মুরগির একটি একক ঝুঁটি থাকে। এর খাঁজগুলো সুষম। মাথার ঝুঁটি, কানের লোব (লতি) এবং গলার ফুল উজ্জ্বল লাল; চোখ গাঢ় বাদামী, চঞ্চু (ঠোঁট) এবং পায়ের নখ ধূসর।
নীলাভ কালো পা, কানের লতির মধ্যে সাদা সাদা স্পট আছে। ফাউমি মুরগির চামড়ার রঙ নীল স্লেট। রূপালী-সাদা রঙের ঘাড় এবং কালো কালো ছোপের পালকে ঢাকা সারা শরীর।
ফাউমি জাতের মুরগির দুটি রঙের জাত স্বীকৃত: সিলভার-পেন্সিল এবং গোল্ড-পেন্সিল। পালকের রঙের প্যাটার্ন বেলজিয়ান ব্র্যাকেলের সঙ্গে মিল রয়েছে।
ব্যান্টাম ফাউমি জাতটি সব দিক থেকে আদর্শ আকারের মুরগির মতো। কিন্তু ওজন মাত্র প্রায় ৪০০ গ্রাম।
ফাউমি বেশ সহিষ্ণু জাত। এরা বাংলাদেশের মতো গরম আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত। এই মুরগির খাওয়ায় সাধারণত অরুচি হয় না কখনো। ফ্রি-রেঞ্জ ম্যানেজমেন্টের (উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পালন) জন্য উপযুক্ত।
ফাউমি বেশ ভালো ডিম দেওয়া মুরগির জাত হিসেবে খ্যাত। এরা ছোট আকারের সাদা রঙের ডিম দেয়। তবে সাধারণত ডিমে তা দেয় না বা কুঁচে হয় না। কিন্তু বয়স দুই বছর হলে ডিমে তা দেওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
ব্যান্টাম ফাউমি জাতের মুরগি |
ফাউমি মুরগি অবিশ্বাস্যভাবে রোগ প্রতিরোধী। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিরা বা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে প্রায় শতভাগ সুরক্ষিত থাকার খ্যাতি আছে এদের।
ফাউমি মুরগির দ্রুত ম্যাচুরিটি আসে। ককরেলগুলো (মোরগ) অবিশ্বাস্যভাবে পাঁচ বা ছয় সপ্তাহের মধ্যেই ডাক দেওয়া শুরু করে। মুরগি সাড়ে ৪ বা ৫ মাসের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে।
গড়ে একটি মোরগ প্রায় ১.৮ কেজি ও একটি মুরগি ওজন প্রায় ১.৫ কেজি হয়।
সিলভার পেন্সিল ফাউমি মুরগি সবচেয়ে পরিচিত এবং দেশে একমাত্র ফাউমির জাত।
ফাউমি মুরগির আচরণ
ফাউমি মুরগি উষ্ণ জলবায়ুতে বিশেষভাবে উপযুক্ত, খুবই সক্রিয় ও শক্ত প্রজাতির হয়। তারা খুব তীক্ষ্ণ এবং বেঁচে থাকার জন্য খুব সামান্য ফিড বা খাদ্যের প্রয়োজন হয়। সুতরাং এরা খুব লাভজনক এক প্রজননক্ষম মুরগির জাত।
ফাউমি মুরগি অল্পতে খুব রেগে যায। যখন এদের হাত দিয়ে ধরা হয় বা আঘাত করা হয় তারা খেপে যায়। এ কারণে ফাউমি সব সময় পোষ মানে না। যদিও বিভিন্ন উপায়ে পোষ মানিয়ে রাখা হয়।
ফাউমি খুবই প্রাণবন্ত পাখি, খুব উড়াউড়ি করে এবং গাছ গাছালি খুব পছন্দ করে । তাই যত্নের সঙ্গে সীমানা বা বেড়া দেওয়া প্রয়োজন হয়। আর উঁচু জায়গায় থাকতে পছন্দ করে বলে খামার ঘরের ভেতর বাঁশ টানিয়ে দিলে ভালো হয়।
ফাউমি মুরগি সামান্য আগ্রাসী কিন্তু এরা হিংস্র নয়। মোরগগুলো একে অপরের প্রতি সহনশীল হয়।
ডিম পাড়া মুরগি দিয়ে সাধারণত ডিমে তা দেওয়া হয় না। কিন্তু বয়স দুই বছরের অধিক হলে ডিমে তা দেওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এদের ডিম ইনকিউবেটর মেশিন দিয়ে ফুটানো যায় বা ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়।
ফাউমি মুরগি খুব কঠোর পরিশ্রমী এবং উন্মুক্ত ব্যবস্থায় পালনের জন্য ভালো। এরা ছোট বা ক্ষুদ্র খামারে প্রজননের জন্য খুব উপযুক্ত। ফাউমি মুরগি বছরে প্রায় ২৫০-২৬০ টি ডিম দেয়।
0 Comments