সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

কোথায় কীভাবে পাবেন জমির এসব দলিলপত্র, খরচ কত

Land document, জমির দলিল সেটেলমেন্ট অফিস

জমির দলিলপত্র খুঁজতে গিয়ে সবাইকে কমবেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। আগের কালের মানুষেরা টিনের বাক্স বা সুটকেস বা ট্রাঙ্কে ভরে রাখতেন এসব দলিল দস্তাবেজ। কিন্তু যত্নের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। 


ফলে জমি ক্রায়-বিক্রয় ও হস্তান্তর অথবা ব্যাংক ঋণ নিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এসব কাজে সাধারণত যে দলিলপত্রের দরকার হয় সেগুলো হলো: পর্চা বা খতিয়ান, দলিল ও ম্যাপ বা নকশা। অনেকে জানেন না এসব দলিল বা নথিপত্র কোথায় গেলে পাওয়া যাবে। কীভাবেই বা দলিল তুলতে হয়। এর জন্য মানুষ ভূমি অফিসে গিয়ে দালাল ধরেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।


জমির খতিয়ান, দলিলসহ স কাগজপত্র সরকারি বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে। এসব দপ্তরে গিয়ে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নথি পাওয়া আপনার অধিকার।


আপনার জমির খতিয়ান বা পর্চা কোথায় পাবেন?

জমির পর্চা বা খতিয়ান মূলত তিন/ চারটি অফিসে পাবেন:

১. ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

২. উপজেলা ভূমি অফিস।

৩. জেলা ডিসি অফিস।

৪. সেটেলমেন্ট অফিস।


ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিস

ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যদিও খতিয়ান বা পর্চার বালাম বহি থাকে কিন্তু আপনি এই অফিস থেকে খতিয়ানের কপি নিতে পারবেন না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুধু খসড়া খতিয়ান নিতে পারবেন যেটা আইনত কোনো মূল্য নেই। এরপরেও এই অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, আপনার জমির খতিয়ান নম্বর জানা না থাকলে এই অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর এই অফিসে দিতে হয়।


উপজেলা ভূমি অফিস:

যদিও উপজেলা ভূমি অফিসের মূল কাজ নামজারী বা খারিজ বা মিউটেশন করা। তবে খসড়া খতিয়ান তুলতে পারবেন। এই অফিস থেকে খতিয়ানের সার্টিফায়েড পর্চা বা কোর্ট পর্চা তুলতে পারবেন না।


জেলা ডিসি অফিস:

এই অফিস থেকে পর্চা বা খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই অফিসের খতিয়ানের গুরুত্ব সর্বাধিক। সব জায়গায় এই অফিসের খতিয়ানের গুরুত্ব রয়েছে।


সেটেলমেন্ট অফিস:

শুধু নতুন রেকর্ড বা জরিপের পর্চা/খতিয়ান এই অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। পাশাপাশি নতুন রেকর্ডের ম্যাপও সংগ্রহ করা যায়।


খতিয়ান তুলতে কত টাকা লাগবে?

সিএস, এসএ, আরএস-এর জন্য কত টাকা দিতে হবে তা নির্ভর করে ওই স্থানের সিন্ডিকেটের ওপর। এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। তবে সরকার জমির দলিলপত্র ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি হলে আপনি ঘরে বসে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নথিপত্র তুলতে পারবেন। লেখার একদম নিচে সরকার নির্ধারিত খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে।


আপনার জমির দলিল বা বায়া দলিল কোথায় পাবেন?

দলিল বা দলিলের সার্টিফায়েড কপি বা নকল মূলত দুটি অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়, তা হলো:


ক. উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।

খ. জেলা রেজিস্ট্রি বা সদর রেকর্ড রুম অফিস।


উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

এখানে নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এই অফিস থেকে নতুন দলিলের নকল ও মূল দলিল পাওয়া যায়। কিন্তু পুরাতন দলিল বা বায়া দলিল এই অফিসে পাওয়া যায় না।


জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম:

এই অফিসে নতুন বা পুরাতন দলিলের সার্টিফাইড কপি বা নকল পাওয়া যায়। 


মূল অথবা সার্টিফায়েড দলিল তুলতে কত টাকা লাগতে পারে? 

মূলতঃ সরকারি খরচ যদিও সামান্য কিন্তু নকলের খরচ নির্ভর করে ওই স্থানের সিন্ডিকেটের ওপর। এই লেখার একদম শেষের দিকে দলিল উত্তোলনের সরকারি খরচ সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে।


জমির মৌজা ম্যাপ বা নকশা যেখানে পাওয়া যাবে:

সাধারণত ম্যাপ বা নকশা দুইটি অফিসে পাবেন, তা হলো


১. জেলা ডিসি অফিস

২. ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ( DLR) অফিস, ঢাকা।


জেলা ডিসি অফিস:

এই অফিস থেকে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস যেকোনো মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা যাবে।


ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, (তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়), ঢাকা।


সারা বাংলাদেশের যে কোনো মৌজা ম্যাপ সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, জেলা ম্যাপ, বাংলাদেশ ম্যাপ উক্ত অফিস হতে তুলতে পারবেন।


এই অফিসের ম্যাপের গ্রহণযোগ্যতা ও অনেক বেশি। সারা বাংলাদেশের যে কোন ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়।


দলিলের নকল গ্রহণের সরকার নির্ধারিত ফি

দলিল উত্তোলনের সরকার নির্ধারিত ফি

১. কোনো আবেদনকারী, কার্যালয়ের অন্যান্য নকলের কাজ অপেক্ষা, নকলের জন্য অগ্রাধিকার চাইলে অর্থাৎ জরুরি ভিত্তিতে চাইলে অতিরিক্ত ৫০/- টাকা দিতে হবে বা, যদি নকলটি প্রতি পৃষ্ঠায় ৩০০ শব্দবিশিষ্ট ৪ পৃষ্ঠার বেশি হয়, তালে প্রতি পৃষ্ঠার জন্য ১৫/- টাকা হারে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।। [দফা জি(বি)]


২. যদি কোনো আবেদনকারী ইতিমধ্যে নিবন্ধিত কোনো দলিলের কাগজে ছাপা বা টাইপ করা নকল দাখিল করে সেটি “অবিকল নকল” মর্মে প্রত্যয়নযুক্ত হিসেবে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তাহলে সেই নকলের তুলনা করার জন্য ফি ও পারিশ্রমিকের দফা ‘জি’ ও ‘জিজি’ অনুসারে ধার্যযোগ্য ফি ও পারিশ্রমিকের অর্ধেক হবে। [টীকা -১, নিবন্ধন ম্যানুয়াল ২০১৪, পৃষ্ঠা নং – ২৩০] 


৩. ফি অব্যাহতি পাওয়া নকল ছাড়া অন্যান্য সব নকলের আবেদনে কোর্ট ফি আইন, ১৮৭০ অনুসারে, ২০ টাকার কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। [টীকা -২, নিবন্ধন ম্যানুয়াল ২০১৪, পৃষ্ঠা নং – ২৩০] 


৪. তল্লাশ ও পরিদর্শন ছাড়া সরাসরি নকলের আবেদন করা হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এফ(১) এবং এফ(২) ফিস পরিশোধ করতে হবে [অনুচ্ছেদ ১৭৩, মহা-পরিদর্শক, নিবন্ধন কর্তৃক প্রচারিত বিভাগীয় উপদেশ ও আদেশাবলি]।

Post a Comment

0 Comments